প্রতীকী ছবি
আক্রান্ত হয়েছিলেন হৃদ্রোগে। তার জন্য ভর্তি হতে হয়েছিলেন হাসপাতালে। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন শুক্রবার বিকেলে। কিন্তু শনিবার, স্বাধীনতা দিবসে খবর আসে তাঁর করোনা-রিপোর্ট পজ়িটিভ। তার পর থেকেই চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন ৮২ বছরের মানুষটি। রবিবার সকালে ফ্ল্যাটের ঝুল-বারান্দার রেলিংয়ে ঝুলন্ত দেহ মিলল ওই বৃদ্ধের। বারাসত নবপল্লির এই ঘটনায় হতবাক তাঁর পরিবারের লোকেরা।
করোনা-আতঙ্কেই তিনি আত্মঘাতী হতে পারেন বলে মনে করছে পুলিশ। করোনা-আতঙ্কে এর আগে অনেক ঘটনা ঘটলেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে কি না মনে করতে পারছে না পুলিশও। করোনা-আতঙ্ক মানুষের মধ্যে অবসাদ তৈরি করছে বলে বারবার সাবধান করছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। এই ঘটনা তারই প্রমাণ বলে মতামত পুলিশ এবং চিকিৎসকদের।
বৃদ্ধের পরিবারের বাকি সদস্যদের হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে। নবপল্লির এক আবাসনে তেতলার একটি ফ্ল্যাটে ছেলের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক দিন আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বৃদ্ধ। বারাসতেরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হন তিনি। কিছু শারীরিক সমস্যা থাকায় বেশ কিছু দিন হাসপাতালেই থাকতে হয়েছিল তাঁকে। শুক্রবার সেখান থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়ার আগে বৃদ্ধের লালারস সংগ্রহ করা হয়েছিল। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর রিপোর্ট আসে। হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয়, বৃদ্ধের করোনা-রিপোর্ট পজ়িটিভ। এই খবর জানার পরেই চুপচাপ হয়ে যান তিনি। বাড়ির কারওর সঙ্গে বিশেষ কথা বলেননি। রবিবার সকালে বারান্দার বাইরে তাঁর
দেহ ঝুলতে দেখে এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। বারান্দার উপরের রেলিং থেকে গলায় কাপড়ের ফাঁস দিয়ে তিনি বাইরের দিকে ঝুলে পড়েছিলেন বলে পুলিশ মনে করছে।
অবসাদ-হতাশা না কি অন্য কোনও কারণে তিনি এই পথ বেছে নিয়েছেন, পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে তা বোঝার চেষ্টা করবে পুলিশ। বৃদ্ধের দেহ পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁর ছেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের মানসিক অবস্থা ভাল নয়। ফলে এই বিষয়ে কিছু বলতে
পারব না।” বৃদ্ধের পরিবারের সদস্যেরা হোম কোয়রান্টিনে থাকায় পুলিশ তাঁদের সঙ্গে বিশেষ কথা বলতে পারেনি।
রিপোর্ট জানার পরে বাড়ির লোকেরা তাঁকে নিজের ঘরে হোম আইসোলেশনে থাকতে বলেছিলেন, না কি ফের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। যদিও এই ঘটনায় পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। বারাসত থানার পুলিশ জানিয়েছে, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন, তা জানার চেষ্টা হবে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)