Coronavirus in Kolkata

করোনা-কাঁটায় বোর্ডের অফলাইন পরীক্ষা ঘিরে বাড়ছে আতঙ্ক

আইসিএসই এবং সিবিএসই বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হতে আর এক মাসও বাকি নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ০৫:০৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

আইসিএসই এবং সিবিএসই-র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা কি এ বার অফলাইনে হওয়া সম্ভব? করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে ভাবে দেশ জুড়ে আছড়ে পড়েছে, তাতে চিন্তিত শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে অভিভাবকেরা। শিক্ষকদের একাংশের মতে, বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অনলাইনে নয়, অফলাইনেই নেওয়া উচিত। শিক্ষকদেরই অন্য একটি অংশের আবার প্রশ্ন, করোনার সংক্রমণ যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে গণপরিবহণে চেপে পরীক্ষার্থীরা কী ভাবে স্কুলে এসে পরীক্ষা দেবে? তাই অনলাইনেও পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হোক। অভিভাবকদের একাংশও জানাচ্ছেন, যে ভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, তাতে ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে তাঁরা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এমনকি, কোনও কোনও অভিভাবক করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ারও আর্জি জানাচ্ছেন।

Advertisement

আইসিএসই এবং সিবিএসই বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হতে আর এক মাসও বাকি নেই। বেশ কয়েকটি স্কুলে শুরু হয়ে গিয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা। শহরের কয়েকটি স্কুলের অধ্যক্ষেরা জানাচ্ছেন, প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা নিতে গিয়েও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আইসিএসই বোর্ড পরিচালিত উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের অধ্যক্ষের কথায়, “যে পরীক্ষকের আমাদের স্কুলে এসে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল, তাঁর কোভিড ধরা পড়েছে। তিনি পরীক্ষা নিতে পারছেন না। তাই প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা অন্য দিন হবে। প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার তারিখ পাল্টানো যায়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার তো তারিখ সব সময়ে পাল্টানো যাবে না। করোনা যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে দেশ জুড়ে একসঙ্গে বোর্ডের লিখিত পরীক্ষা দেওয়া কি সম্ভব?”

অধ্যক্ষদের মতে, এ বার বিশেষ পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে প্রশ্নপত্রের একাধিক সেট তৈরি রাখা দরকার। যাতে কোনও কারণে কোথাও পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে অন্য প্রশ্নপত্রের সেটে পরীক্ষা দিতে পারে পরীক্ষার্থীরা। সূত্রের খবর, এ বছর পরীক্ষা চলাকালীন কোনও পরীক্ষার্থীর করোনা ধরা পড়লে তার যাতে বছর নষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা করবে বোর্ড। সে ক্ষেত্রে তার পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।

Advertisement

সিবিএসই বোর্ডের অধীন শ্রীশিক্ষায়তন স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মে মাসে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেতেই পারে। আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।” তিনি জানান, পরীক্ষার সময়ে
সকলকে দূরত্ব-বিধি মেনে বসানো হবে। স্কুল চত্বর নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। তবে পরীক্ষার সময়ে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে কী করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত বোর্ডকেই নিতে হবে। তবে তাঁর মতে, “যদি দেখা যায়, করোনা মে মাসে লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে, তখন সেই অবস্থায় গণপরিবহণে চেপে পরীক্ষা দিতে আসা খুবই ঝুঁকির। তাই পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে।”

মডার্ন হাইস্কুলের ডিরেক্টর দেবী করের মতে, “পরীক্ষা কী পদ্ধতিতে হবে, তা বোর্ডই ঠিক করবে। পরীক্ষার্থীদের শুধু একটা কথাই বলব, স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে ভাল করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নাও।” ডন বস্কো পার্ক সার্কাসের অধ্যক্ষ বিকাশ মণ্ডল বলেন, “পরীক্ষা যেন বাতিল না হয়। অফলাইনে যদি একান্তই নেওয়া সম্ভব না হয়, তা হলে যেন অনলাইনেই পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনলাইনের জন্য এমন ভাবে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হোক, যাতে পরীক্ষার্থীরা বই বা খাতা দেখে লিখতে না পারে।”

তবে এখনও পর্যন্ত এ বারের বোর্ডের পরীক্ষা অফলাইনে হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে শহরের বেশির ভাগ আইসিএসই ও সিবিএসই বোর্ডের অধীনস্থ স্কুল। বাগুইআটির ন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের অধ্যক্ষা মৌসুমী সাহা বললেন, “পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া শুরু হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই যাতে তারা পরীক্ষা দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাসরুমের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাখা হবে আইসোলেশন রুমও।”

তবে শহরের অধিকাংশ স্কুলের অধ্যক্ষেরাই জানাচ্ছেন, রাস্তাঘাটে মানুষজন যে ভাবে মাস্ক ছাড়াই বেরিয়ে পড়ছেন, তাতে তাঁরা খুবই আতঙ্কিত। তাঁদের আর্জি, মনে রাখতে হবে, বিধানসভা ভোটের পরেই পরীক্ষার মরসুম শুরু। ভোটপর্ব সুষ্ঠু ভাবে মেটা যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর সুস্থ থেকে পরীক্ষা দেওয়াটা। এমনিতেই এ বার পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছে। এর পরে ফের যদি পরীক্ষা পিছোয় বা বাতিল হয়, তা হলে পরীক্ষার্থীরা খুবই অসুবিধায় পড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement