Coronavirus

আতঙ্ক কাটাতে করোনা লড়াইয়ে ভরসা গবেষকেরা

Advertisement

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০৩:২৫
Share:

চারপাশে নানা যন্ত্রপাতি, পিসিআর মেশিন। পিপিই পরে কিছু মানুষের ব্যস্ত আনাগোনা। কলকাতার কয়েকটি গবেষণাগারের বর্তমান ছবিটা এমনই। দিনরাত এক করে চলছে করোনা-পরীক্ষা। ভাইরাস বনাম মানুষের এই যুদ্ধে চিকিৎসকদের পাশাপাশি প্রথম সারিতে রয়েছেন ওই গবেষকেরাও।

Advertisement

এ রাজ্যে গড়ে চার হাজার পরীক্ষা হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু সংখ্যাটা যে আরও অনেকটা বাড়ানো প্রয়োজন, তা নিয়ে একমত সকলে। আর তাতে দিশা দেখাতে পারেন গবেষকেরাই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) গোড়াতেই বার্তা দিয়েছিল, ‘শুধু লকডাউনে কোনও লাভ নেই। করোনা-পরীক্ষাও করাতে হবে। না-হলে কে ভাইরাসটির বাহক, কে আক্রান্ত, বোঝা সম্ভব নয়।’ করোনা-পরীক্ষার মূলত চারটি ধাপ— রোগীর নমুনা সংগ্রহ, আরএনএ নিষ্কাশন, রিয়েল টাইম পিসিআর এবং রিপোর্ট তৈরি। স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করছেন। বাকি কাজ করতে পারেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান ও গবেষকেরা। কিন্তু আক্রান্তদের থেকে নমুনা সংগ্রহ ও তা থেকে আরএনএ নিষ্কাশন করতে ভয় পাচ্ছেন গবেষকদের অনেকেই। এক প্রবীণ গবেষকের মুখে শোনা গেল সেই ‘ভয়ের’ কথা। বললেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের তো জোর করতে পারি না। যদি সংক্রমিত হয়ে যায়!’’ কিন্তু এই ভয়কে ‘অহেতুক’ বলে মনে করছেন চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘বিজ্ঞানীরা ভয় পেলে বিজ্ঞানের দায়িত্ব নেবেন কে?’’

Advertisement

আইআইএসইআর-এর বিজ্ঞানী জয়শ্রী দাশশর্মা জানান, ২০০৩ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া’য় সার্স-কোভ নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ভাইরাস যাতে ব্যাপক ভাবে ছড়াতে না পারে, তার জন্য আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে। সরকার চাইলে আমি ও আমার ছাত্রছাত্রীরা আরএনএ এক্সট্র্যাকশন, আরটি-পিসিআরের জন্য তৈরি।’’ এর জন্য সরকার থেকে ‘বায়ো-সেফটি লেভেল থ্রি’ (বিশেষ ধরনের পিপিই) দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। জয়শ্রীর বক্তব্য, যথাযথ নিরাপত্তা নিলে পরীক্ষা করতে গিয়ে সংক্রমণের ভয় থাকে না।

ভীতি কাটিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তরুণ গবেষক আরএনএ নিষ্কাশনের কাজে এগিয়ে এসেছেন। যেমন ‘স্কুল অব ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড লিভার ডিজ়িজ়েস’ (এসডিএলডি)-এর ‘সেন্টার ফর লিভার রিসার্চ’-এর গবেষক সায়ন্তনী ভৌমিক। নিজের গবেষণা বন্ধ রেখে আপাতত এসএসকেএমে করোনা-পরীক্ষা করছেন তিনি। বললেন, ‘‘আমার মতো আরও অনেকে অংশ নিয়েছেন। সবাই সাগ্রহে কাজ করছি। সংক্রমণের ভয় থাকে ঠিকই, কিন্তু সেটা নিরাপত্তা বিধি না-মানলে। মাস্ক, পিপিই, স্যানিটাইজ়ার— প্রয়োজনীয় সব কিছুই দেওয়া হয়েছে আমাদের।’’ অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘এখন প্রতিদিন চার হাজার পরীক্ষা হচ্ছে। সেটা অন্তত দশ হাজার হওয়া দরকার। তার জন্য গবেষকদের ভীষণ ভাবে প্রয়োজন।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন তথা প্রাণী-বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মধুসূদন দাস জানিয়েছেন, সরকারকে সব রকম সাহায্যে তাঁরা আগ্রহী। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করোনা-পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। দরকারে আরও সাহায্য করা হবে। আমি আশাবাদী, সরকার চাইলে গবেষকদের একটা বড় অংশ এগিয়ে আসবেন। কিন্তু সরকারকেও আর একটু উদ্যোগী হতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, পরীক্ষা ঠিক মতো না-হলে সংক্রমণ ক্রমশ বাড়বে। যে গবেষকেরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরাও এক দিন আক্রান্ত হবেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান কৌস্তুভ পান্ডার মতে, ‘‘করোনা-পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষক প্রয়োজন। দক্ষতা থাকলে পরীক্ষা করতে গিয়ে সংক্রমণের ভয় থাকবে না।’’ এ প্রসঙ্গে এসডিএলডি-র গবেষক স্বাগতা মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা নতুন গবেষণা শুরু করেছেন, তাঁদেরও যদি কিছু দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, এই পরীক্ষা করতে পারবেন। ভীষণ জটিল নয়।’’

সিএসআইআর-আইআইসিবি-র বিজ্ঞানী পার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারের হাতে এক সময়ে পরীক্ষার সামগ্রীও ছিল না। বিভিন্ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট যন্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করেছে। লোকবল প্রয়োজন হলে নিশ্চয়ই বিজ্ঞানীরা এগিয়ে আসবেন।’’ কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম মজুমদারও আশাবাদী। বললেন, ‘‘আরএনএ নিষ্কাশন, রিয়েল টাইম পিসিআর পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটা বাড়ানো দরকার। তরুণ গবেষকেরা দল বেঁধে এগিয়ে এলেই তা সম্ভব। দেশের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তাঁরা যে এগিয়ে আসবেন, আমি নিশ্চিত।’’

আরও পড়ুন: পড়শিদের মানবিকতায় আপ্লুত ‘বন্দি’ কাশ্মীরিরা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement