প্রতীকী ছবি
চিকিৎসক পরিবারের সদস্য এক বৃদ্ধাকে গৃহ-পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য হাসপাতাল লিখে দিলেও প্রতিবেশীদের বাধায় তা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ। সমস্যার সুরাহা হয়নি ১০০ নম্বরে
ফোন করে পুলিশের সাহায্য চাওয়ার পরেও। গৃহ-পর্যবেক্ষণে রাখতে না-পেরে শয্যার খোঁজে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে শেষে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃদ্ধাকে ভর্তি করায় ওই চিকিৎসক পরিবার। তবে সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হল না তাঁর! শুক্রবার রাতে ওই হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার।
মৃতার নাতনির অভিযোগ, “আমার স্বামী কৃষ্ণনগর সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে এ বছর স্বর্ণপদক পেয়েছেন। আমার ভাইও একটি মেডিক্যাল কলেজের হাউসস্টাফ। তা সত্ত্বেও আমাদের যা অভিজ্ঞতা হল, তা বলার নয়। প্রতিবেশীরা আমাদের দিদিমাকে বাড়িতে রাখতেই দিলেন না। জরুরি সময়ে শয্যার জন্যও ঘুরতে হল।”
উপসর্গহীন করোনা রোগীদের বহু ক্ষেত্রেই বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর জন্য বলা হচ্ছে হাসপাতাল থেকে। যাঁদের বাড়িতে আলাদা থাকার ব্যবস্থা নেই, তাঁদের জন্য বহু জায়গায় তৈরি হচ্ছে সেফ হোমও। সরকার বার বার ঘোষণা করছে, উপসর্গহীন কাউকে হাসপাতালে রাখলে একটি শয্যা আটকে থাকে। তার বদলে সঙ্কটজনক কোনও করোনা রোগীকে শয্যাটি দেওয়া যেতে পারে। এ জন্য উপসর্গহীনদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি আরও বেশি করে সেফ হোম তৈরির কথাও বলা হচ্ছে। যদিও একাধিক জায়গায় এ ধরনের সেফ হোম বন্ধ করে দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ চড়াও হয়ে ঝামেলা করছেন বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় আবার উপসর্গহীন করোনা রোগীকে বাড়িতে রাখতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছে যে, একটি চিকিৎসক পরিবারকেই যদি এ ভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে হয় ও শয্যা পেতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়, তা হলে সাধারণ পরিবারের কোনও রোগীর ক্ষেত্রে কী হচ্ছে?
ওই পরিবারের সদস্যেরা জানালেন, ৭০ বছরের বৃদ্ধা ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর পরিবারের দুই চিকিৎসকই তাঁর দেখাশোনা করতেন। গত ৩১ জুলাই বৃদ্ধার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তবে ২ অগস্ট তাঁকে ছুটি দিয়ে ওই হাসপাতাল লিখে দেয়, বৃদ্ধা উপসর্গহীন। তাঁকে বাড়িতে রাখাই ভাল। কারণ, হাসপাতালে রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকবে। বৃদ্ধার নাতনির অভিযোগ, এর পরে দু’দিন ধরে তাঁরা প্রতিবেশীদের নানা বাধার সম্মুখীন হন। তাঁর চিকিৎসক ভাইকে বাড়িছাড়া করারও হুমকি দেওয়া হয় বলে তাঁর দাবি। ৪ অগস্ট চরম হেনস্থার মুখে পড়ে পুলিশে ফোন করেন তাঁরা। যদিও প্রতিবেশীদের বুঝিয়ে বৃদ্ধাকে বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেনি পুলিশও।
এর পরে একাধিক বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতালে শয্যার জন্য ঘুরে শেষে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে বৃদ্ধাকে ভর্তি করাতে পারেন তাঁরা। পরিজনদের অভিযোগ, এর আগে বৃদ্ধাকে ১৮ ঘণ্টা রাখার জন্য বরাহনগরের একটি হাসপাতাল তাঁদের থেকে নিয়েছে ৫২ হাজার টাকা! সরকারি হাসপাতালে শয্যার জন্য একটি ফর্ম পূরণ করে প্রায় ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হত বলে তাঁদের দাবি।
শনিবার বৃদ্ধার নাতনি বলেন, “যেটার ভয় ছিল, সেটাই হল। সাগর দত্তে দিদিমার সংক্রমণ বেড়ে গেল। কাল রাতে হঠাৎ ওই হাসপাতাল থেকে খবর এল, দিদিমা আর নেই। চিকিৎসক পরিবার হয়েও এক জন উপসর্গহীন বৃদ্ধাকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, নাগরিকেরা সচেতন না হলে এ বার এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন কর্তারা। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “ওই পরিবার লিখিত অভিযোগ করলে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেফ হোম তৈরির ক্ষেত্রে বা হাসপাতাল লিখে দেওয়ার পরেও কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে এ বার তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।”
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)