দাবি মতো টাকা দিলে কোভিড-মৃতের পরিবারকে এ ভাবে সৎকার দেখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
‘করোনারোধী কার্ড’ গলায় ঝোলানো থেকে করোনা তাড়াতে গো-মূত্র পানের স্টল দেওয়া! অতিমারি ঘিরে ব্যবসার অন্ত নেই। এর সঙ্গেই অভিযোগ উঠেছিল পিপিই, স্যানিটাইজ়ার, মাস্কের কালোবাজারি নিয়ে। এ বার সেই তালিকাতেই যুক্ত হয়েছে আর এক নতুন ব্যবসা!— ‘ফিউনেরাল সার্ভিস’ এর নামে মোটা টাকায় কোভিড মৃতদেহ সৎকার!
অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালে মৃতের পরিবারের থেকে দেহের সৎকার বাবদ ওই সব সংস্থা সাত থেকে ১০ হাজার টাকা হাঁকছে। ১৫ হাজারের কমে দেহ ছোঁয়াই যাবে না, এমন কথাও শুনেছে কোনও কোনও পরিবার! হাসপাতালই ওই সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করাচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে দেহ হাসপাতালেই পড়ে থাকছে দিনের পর দিন! এর আগে হাওড়ায় একাধিক ঘটনায় দেখা গিয়েছে কোভিডে মৃতের দেহ ছোঁয়ার জন্য ডোম বলে পরিচয় দেওয়া এক দল যুবক মৃতের পরিবারের থেকে মোটা টাকা দাবি করেছে।
অভিযোগ, সরকারি এক নির্দেশকে সামনে রেখেই এমন ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। সূত্রের খবর, কলকাতা পুরসভার অনুমোদন সাপেক্ষে গত ৪ জুলাই থেকে দু’টি সংস্থা বেসরকারি হাসপাতালের কোভিড মৃতদেহ সৎকারের কাজ করছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, ওই দুই সংস্থা এবং করোনায় মৃতের পরিবারের মধ্যে মধ্যস্থতা করবে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল। নির্দেশ রয়েছে শববাহী গাড়ির ভাড়া বা অন্যান্য খরচ ধরেই পাঁচ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না।
কিন্তু অভিযোগ, হাসপাতালগুলি রোগীর পরিবারের কাছে সংস্থার এজেন্টের ফোন নম্বর দিয়েই দায় ঝেড়ে ফেলছে। সুযোগ বুঝে সৎকারের দর চড়াছে সংস্থার লোকজন।
ই এম বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে শুক্রবার করোনায় মৃত এক ব্যক্তির আত্মীয়দের দাবি, বিল মেটানোর সময়ে হাসপাতাল থেকেই তাঁদের বলা হয়, সৎকারের জন্য ভাল ‘চার্জ’ দিতে প্রস্তুত থাকতে। এর পরে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। অভিযোগ, তাতে ফোন করতেই সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। জানানো হয়, ওই টাকা দিলে দেহ চুল্লিতে ঢোকা পর্যন্ত দেখতে দেওয়া হবে। এমনকি অন্ত্যেষ্টির রীতিও পালন করতে দেওয়া হবে।
উল্টোডাঙার কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় মৃত এক বৃদ্ধের ছেলের কথায় “বেসরকারি হাসপাতালে দিলে বাবা সুস্থ হয়ে যাবেন ভেবে এগিয়েছিলাম। ছ’দিনে সাড়ে চার লক্ষ টাকা বিল হয়েছে। এর পরে সৎকারের জন্য ১৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। ওই টাকা দিতে পারব না বলায় তিন দিন দেহ ফেলে রাখা হল। সৎকারের গাড়িও ফিরে গেল। পাড়ার এক দাদাকে ধরে পাঁচ হাজার টাকায় সৎকারের ব্যবস্থা করেছি।”
সৎকারের কাজ পাওয়া একটি সংস্থার কর্মী বাবু ঘোষের দাবি, “কর্মীদের বেতন, পিপিই-র দাম, স্যানিটাইজ় করার খরচও প্রচুর। তাই তো টাকা চাওয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে নেওয়া দেহ পিছু পুরসভার তিন হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা আমাদের। সেই টাকা পাচ্ছি না। তাই বেসরকারি হাসপাতাল থেকেই খরচ তুলতে হচ্ছে।”
এই অবস্থা কেন?
পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর এক সদস্য বললেন, “কোভিড দেহ সৎকারের ক্ষমতা অতিক্রম করে গিয়েছে পুরসভা। তাই দু’টি সংস্থা আর বেসরকারি হাসপাতালের হাতে বিষয়টি ছাড়া হয়েছে।” পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতীন ঘোষ বললেন, “এটা আমাদের দেখার কথা নয়। বেসরকারি হাসপাতালগুলিই এ ব্যাপারে বলতে পারবে।”
যে সব বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারাও চুপ। আমরি গ্রুপের সিইও তথা অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বলেন, “সরকারি নিয়ম রয়েছে, কোভিডে মৃতের সৎকারের জন্য পাঁচ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। বেশি টাকা কেউ নিলে তিনি অন্যায় করছেন। এ ব্যাপারে আরও নজরদারির প্রয়োজন।”
এত দিনেও পর্যাপ্ত নজরদারি নেই কেন? এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের কারও কাছেই।