Coronavirus in Kolkata

Coronavirus: অতিমারির চতুর্থ ঢেউ প্রতিরোধে অস্ত্র সচেতনতাই

চিকিৎসকদের মতে, করোনা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, এমন ঘোষণা এখনও করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ০৬:৩৭
Share:

ফাইল চিত্র।

‘কোথায় করোনা? ও এখন সাধারণ জ্বর-কাশি হয়ে গিয়েছে!’

Advertisement

রাজ্যে, বিশেষত কলকাতা ও শহরতলির অধিকাংশ মানুষ এখন এমনই চোখে দেখছেন করোনাকে। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাঝেমধ্যেই কলকাতা, এমনকি রাজ্যে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা নেমেছে শূন্যে। রোজ সংক্রমিতের সংখ্যাও থাকছে ১০০-এর ঘরে বা তার নীচে। যা মানুষের বেপরোয়া মনোভাবকে বাড়িয়ে তুলছে। উধাও হচ্ছে কোভিড-বিধি। অথচ চতুর্থ ঢেউ আসা প্রায় নিশ্চিত বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। সচেতনতাই সেই বিপদ খানিকটা কমাতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে এ-ও মনে করাচ্ছেন, করোনা-বিধি মেনে চলার কোনও বিকল্প নেই।

চিকিৎসকদের মতে, করোনা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, এমন ঘোষণা এখনও করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাই তৃতীয় ঢেউ শেষের তিন-চার মাস পরেই দেশ তথা রাজ্যে পরবর্তী ঢেউ আসার আশঙ্কা থাকছে। মার্চের প্রথম দিকে রাজ্যে তৃতীয় ঢেউ শেষ হয়েছে। ফলে জুন-জুলাই বা কয়েক মাস পরে চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে।

Advertisement

চলতি মাসেই এ নিয়ে সমস্ত রাজ্যকে যে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক, তাতে জোর দেওয়া হয়েছে জিনোম সিকোয়েন্সের উপরে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগৃহীত ৬১২টি লালারসের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য কল্যাণীতে পাঠানো হয়েছিল। তার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২৯টির সিকোয়েন্সিং করা যায়নি। বাকি ৫৮৩টির মধ্যে ৪২৪টি নমুনায় ওমিক্রন এবং ১৬টিতে ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস মিলেছে। ১৪৩টির ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, তৃতীয় ঢেউয়ে ওমিক্রনের উপস্থিতি ছিল ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ যে ডেল্টা, তা অল্প মাত্রায় এখনও রয়ে গিয়েছে।

চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম-সহ কয়েকটি দেশে ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.২ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যদিও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই উপ-প্রজাতির ভাইরাসেই রাজ্যে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। সম্প্রতি গাণিতিক মডেলে করা কানপুর আইআইটি-র গবেষণা বলছে, ২৩ জুন থেকে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে দেশে চতুর্থ ঢেউ আসার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এটি পুরোপুরি মানতে নারাজ শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়েরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, তৃতীয় ঢেউয়ে প্রকৃত কত জন আক্রান্ত, কত জনের প্রতিষেধক নেওয়া হয়েছে বা বাকি রয়েছে— এর উপরেই চতুর্থ ঢেউ নির্ভর করবে।

দীপ্তেন্দ্রের কথায়, ‘‘দ্রুত ছড়ালেও দুর্বল হওয়ার কারণে ওমিক্রনে মৃত্যুহার কম ছিল। তাই আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন-চার মাস থাকবে। জুন-জুলাইয়ে তাঁদের ফের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তাই চতুর্থ ঢেউ এলেও তা আরও দুর্বল না শক্তিশালী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’ চিকিৎসক অনির্বাণ বলছেন, ‘‘করোনার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ভাইরাসের চরিত্রের উপরে। প্রতিষেধকের বড় ভূমিকা রয়েছে। তাই প্রতিষেধক প্রদানে জোর দিতে হবে। নতুন স্ট্রেন আসছে কি না, সে দিকে নজর রাখতে জিনোম সিকোয়েন্স বাড়াতে হবে।’’

ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের কথায়, ‘‘প্রতিষেধক নিয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। ভাইরাসও তাই স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করবে। কড়া নজরদারি প্রয়োজন।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, চিন, হংকং-সহ পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে বিএ.২.২ ছড়াচ্ছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ডেল্টার বিএ.১ এবং ওমিক্রনের বিএ.২ উপ-প্রজাতির সংমিশ্রিত ‘রিকম্বিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’-এর খোঁজও মিলেছে। সিদ্ধার্থের কথায়, ‘‘প্রথমে বাদুড় থেকে মানুষে করোনা ছড়িয়েছিল। এর পরে রিভার্স জ়ুনোসিস অর্থাৎ মানুষ থেকে প্রাণীতে ও প্রাণী থেকে ফের মানুষে (সেকেন্ডারি জ়ুনোসিস) করোনা ছড়ানোর মতো ঘটনা অতিমারিকে জটিল করে তুলছে। সামগ্রিক ভাবে অনুকূল পরিস্থিতিতে আছি, তা নয়।’’

রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘বিদেশে অতিমারির ঢেউ আসার ৮-১২ সপ্তাহ পরে এ দেশে ঢুকছে। তাই চিন, হংকং, ইংল্যান্ডে যখন ফের ঢেউ শুরু হয়েছে, সেখানে আমরা আশঙ্কামুক্ত— এমনটা ভাবা বোকামি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement