Coronavirus in Kolkata

‘করোনার কথা পরে, বাজারে অত নিয়ম চলে নাকি!’

বছরের প্রথম এবং দ্বিতীয় কাজের দিন— গত সোম এবং মঙ্গলবার ঘুরে দেখা গেল, প্রায় সব বাজারেই উপচে পড়া ভিড়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:২৯
Share:

অসচেতন: দূরত্ব-বিধি হেলায় উড়িয়ে ভিড় ক্যানিং স্ট্রিটের বাজারে। কারও কারও মুখে নেই মাস্কও। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

পুরসভার কড়া নির্দেশ ছিল, শহরের বাজারগুলিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বস্তা মজুত করে যাতায়াতের পথ সঙ্কীর্ণ করা যাবে না। দমকলের অনুমতি ছাড়া দাহ্য বস্তু মজুত করা যাবে না। আরও বলা হয়েছিল, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে নিয়মিত দমকলের ছাড়পত্র নিতে হবে। রাখতে হবে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। কিন্তু শহরের ব্যক্তি মালিকানাধীন বা পুর বাজারের কোথাওই এই নির্দেশিকার বেশির ভাগ মানা হয় না বলে অভিযোগ ছিল। এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হল করোনা-বিধি ওড়ানোর অভিযোগও।

Advertisement

বছরের প্রথম এবং দ্বিতীয় কাজের দিন— গত সোম এবং মঙ্গলবার ঘুরে দেখা গেল, প্রায় সব বাজারেই উপচে পড়া ভিড়। দূরত্ব-বিধি মানার বালাই নেই কোথাও। মাস্কের ব্যবহারও ভুলেছেন অধিকাংশই। ‘মাস্ক ছাড়া সামগ্রী মিলবে না’ লেখা দোকানেও বিক্রিবাটা চলছে মাস্ক ছাড়া। প্রশ্ন করায় এক বিক্রেতা বললেন, ‘‘ও সব নিয়ম প্রথমে ছিল। এখন লোকে করোনা ভুলে গিয়েছে।’’ আর এক পুর বাজারের বিক্রেতার মন্তব্য, ‘‘বাজারগুলো করোনার আঁতুড়ঘর হয়ে দিব্যি চলছে। আদালতের এ নিয়ে নির্দেশ নেই, তাই হয়তো পুলিশ-প্রশাসনেরও মাথাব্যথা নেই।’’

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টাতেই পা ফেলার জায়গা ছিল না বাগড়ি মার্কেটে। সেখানকার পুড়ে যাওয়া ‘এ’ ব্লকে সংস্কারের কাজ চলছে। বন্ধ অন্তত ২০০টি দোকান। তবে চারতলা বাজারের বাকি ৭৫৭টি দোকানে বেশ ভিড়। গেটের কাছে থার্মাল গান দিয়ে পরীক্ষার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এক ধারে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বললেন, ‘‘দিনে কত হাজার লোক আসে জানেন? অত লোকের তাপমাত্রা মেপে কী হবে?’’ দোতলায় ওঠার মুখে পর পর চারটি দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই। রাস্তার অর্ধেক জুড়ে রয়েছে বস্তা। এক দোকানদার সেখানে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘‘এমনিই আগের মতো ব্যবসা নেই। করোনার জন্য কড়াকড়ি করতে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে।’’ বাগড়ি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশুতোষ সিংহও বললেন, ‘‘করোনার কথা পরে হবে, বাজারে অত নিয়ম চলে নাকি? যা আছে সেটাই যথেষ্ট। করোনা হওয়ার হলে এমনিই হবে।’’

Advertisement

একই চিত্র আর এক অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী বড়বাজারের নন্দরাম মার্কেটেও। বাজার চালু রাখার পুর নির্দেশিকা মানার ব্যাপার তো নেই-ই, অগ্রাহ্য করা হচ্ছে করোনা-বিধিও। মার্কেটের কোনও গেটেই থার্মাল গান দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ৯০ শতাংশ ক্রেতা-বিক্রেতাই মাস্ক পরেননি। বাজার সংগঠনের এক সদস্য ভরত আগরওয়ালের দাবি, ‘‘কাকে করোনা নিয়ে বোঝাব? বলতে গেলেই লকডাউনে আয় বন্ধ থাকার গল্প বলবে। প্লাস্টিকে মুখ ঢেকে বলবে, মাস্ক পরে নিয়েছি!’’

শিয়ালদহ সূর্য সেন মার্কেট ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেটিভ সোসাইটির সদস্য শিবু চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘সরকার যা বলেছিল তা প্রথম দিকে মানা হয়েছে। এখন লোকে ব্যবসা করবে না শরীর বাঁচাবে?’’ এই বেপরোয়া ভাব থেকেই তো অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী থেকেছে এই বাজারও! শিবুবাবুর মন্তব্য, ‘‘আসন্ন বিয়ের মরসুমেও ভাল আয় হবে না মনে হচ্ছে। করোনা নিয়ে ভাবব কখন?’’

যদুবাবুর বাজারের ভানুদেব বিশ্বাসও বললেন, ‘‘করোনা নিয়ে অনেক কিছু করা হয়েছে। এখন আমরা পুরনো ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছি, অনলাইনে জিনিস কিনবেন না।’’

হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রঞ্জন রায় যদিও বললেন, ‘‘এত মৃত্যুর পরেও কারও হুঁশ ফিরছে না। বাজারগুলির অবস্থা ভয়াবহ। সরকার এখনই নজর না দিলে কিন্তু মুশকিল!’’

কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমকে এ নিয়ে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন ববি বললেন, ‘‘এমনিতেই আমাদের লোক কম। ফলে চাইলেও নজর রাখা যায় না। সবচেয়ে সমস্যা ব্যক্তি মালিকানাধীন বাজারগুলি নিয়ে। দ্রুত কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement