কড়াকড়ি: মাস্ক পরা নিয়ে সচেতনতার প্রচারের সময়ে মাস্কহীন এক যুবককে প্রিজ়ন ভ্যানে তুলছে পুলিশ। শুক্রবার, নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
মাস্ক না পরে বেরোলে কড়া ব্যবস্থা নেবে কলকাতা পুলিশ। মাস্কহীন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হবে। একশো টাকার বিনিময়ে তিনি জামিন পাবেন। তৃতীয় ঢেউ রুখতে শুক্রবার কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশের যৌথ বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সেই মতো এ দিন বিকেল থেকেই নিউ মার্কেটে ধরপাকড় অভিযান শুরু হয়। মাস্ক না পরা একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে প্রিজ়ন ভ্যানে চাপিয়ে নিউ মার্কেট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁরা একশো টাকার বিনিময়ে জামিন পান। এ দিন বিকেল থেকে ওই থানা এলাকায় সচেতনতার প্রচার শুরু হয়। গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, শ্যামবাজার, কলেজ স্ট্রিটের মতো বাজারেও একই ভাবে রোজ যৌথ অভিযান চালাবে পুরসভা ও পুলিশ। লালবাজার ইতিমধ্যেই সব থানাকে স্থানীয় পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছে।
গত কয়েক দিনে দেশের সঙ্গে শহরেও বাড়ছে সংক্রমণ। এ দিকে, করোনার যাবতীয় বিধি উড়িয়ে রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। যাঁদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। ঘনঘন হাত ধোয়ার পাটও প্রায় চুকেই গিয়েছে। এ সবের কারণে ফের সংক্রমণ বাড়ছে বলে মত চিকিৎসকদের অনেকের। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগে তাই নিয়ন্ত্রণে নামতে চায় পুলিশ ও পুরসভা।
এ দিন পুর ভবনে ওই বৈঠকে ছিলেন পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (এস্ট্যাবলিশমেন্ট) অখিলেশ চতুর্বেদী। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিভিন্ন বাজারে কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতা পুলিশ একসঙ্গে অভিযান চালাবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া-সহ যাবতীয় করোনা বিধি মেনে চলতে মাইকে একসঙ্গে প্রচারও করা হবে। মাস্কহীন ব্যক্তি দেখলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হবে।
পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘শহরের পথেঘাটে এখন প্রচুর মানুষ মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন। এই প্রবণতা বাজারগুলিতে বেশি করে চোখে পড়ছে। যিনি মাস্ক ছাড়া ব্যবসা করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো নেওয়া হবেই। পাশাপাশি বিক্রেতাদের দায়িত্ব থাকবে ক্রেতাদের মাস্ক পরতে বাধ্য করা। না হলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’ ফিরহাদ জানান, এ বার থেকে নিয়মিত বাজার জীবাণুমুক্ত করার কাজও শুরু করবে পুরসভা।
সরকারি পরিষেবা পাওয়ার শিবিরগুলিতে মাস্কহীন মানুষের লাগামছাড়া ভিড়, সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্য কারণ মনে করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের শুরুতে এবং শেষে রোজ দু’বার করে জীবাণুনাশ হবে। সেই প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকারের শিবিরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। না হলে তাঁকে লাইনে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। নিজের হাত জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টিও খেয়াল রাখবেন সবাই। যতটা সম্ভব দূরত্ব-বিধি মেনে দাঁড়াতে অনুরোধ করছি।’’ তিনি জানান, একই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন দিনে শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। তাই বিভিন্ন দিনে নাগরিকদের যাওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন তিনি।
ডেঙ্গি সচেতনতাতেও প্রতিটি ওয়ার্ডে অটোয় প্রচার শুরু হবে। মাস্ক পরা, বাড়ির কোথাও জল না-জমতে দেওয়ার বিষয়েও জনগণকে সতর্ক করা হবে। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই সেফ হোমগুলিতে শিশুদের সঙ্গে মায়েদেরও থাকার ব্যবস্থা থাকবে বলে দাবি পুর কর্তৃপক্ষের।