প্রতীকী চিত্র।
আগুন নেভানোর পাশাপাশি পুজো মণ্ডপে ভিড় ঠেকানোর বাড়তি দায়িত্ব। পুজোয় একসঙ্গে এই দুই কাজ কী ভাবে সামলানো যাবে, সেটাই এখন চিন্তায় রেখেছে দমকলের কর্মীদের।
দমকল সূত্রের খবর, কলকাতায় পুজোর সময়ে বাড়তি ১৭টি জায়গায় অস্থায়ী দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। শহরের বিভিন্ন দমকল কেন্দ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে থাকা বড় মণ্ডপগুলির কাছাকাছি থাকবে এই অস্থায়ী কেন্দ্রগুলি। তবে দমকলকর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, সারা রাজ্যে প্রতিটি দমকল কেন্দ্র যেখানে লোকবলের তীব্র অভাবে ভুগছে, সেখানে বাড়তি অস্থায়ী কেন্দ্র রেখে লাভ কী? দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের ১৪৪টি দমকল কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পদ খালি রয়েছে। কর্মীর অভাবের
পাশাপাশি কর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুন: কেনাকাটার ভিড়ে বড় বিপদের আশঙ্কা পুজোর আগেই
কোভিড পরিস্থিতিতে পুলিশের পাশাপাশি সামনের সারিতে থেকে কাজ করছেন দমকলকর্মীরাও। বিভিন্ন সরকারি অফিস, হাসপাতালে নিয়মিত জীবাণুনাশের কাজ তাঁরা করছেন। দমকল সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ২৩০ জন কর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। বাঁশবেড়িয়া ও বেহালা দমকল কেন্দ্রের দু’জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। কোভিডের প্রকোপ বাড়ায় কয়েক মাস আগে দিন চারেক কাঁথি ও চন্দননগর দমকল কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে দমকলকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, গত ছ’মাসে তাঁদের কার্যত জীবন বাজি রেখে জীবাণুনাশের কাজে যেতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই মেলেনি পিপিই। যেমন, গত মে মাসে বারুইপুরের এক হাসপাতালে মুখে গামছা বেঁধে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল দমকলকর্মীদের। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় এখনও পর্যাপ্ত পিপিই নেই দমকলে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুজোর সময়ে কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পিপিই ও স্যানিটাইজ়ার দিতে হবে। না হলে ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি হবেন কর্মীরা।’’
আরও পড়ুন:মেট্রো চালু হল, সংক্রমণ ফের বাড়ল কলকাতায়, কারণ কি সেটাই?
এর পাশাপাশি উঠছে করোনা মোকাবিলায় দমকল দফতরে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগও। কলকাতার একটি দমকল কেন্দ্রের এক আধিকারিক জানান, কোভিড মোকাবিলায় দমকলের তরফে মাস কয়েক আগে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছিল, রাজ্যের সমস্ত
দমকল কেন্দ্রে কর্মীদের কোভিড পরীক্ষা করা হবে। কিন্তু অভিযোগ, জেলাগুলি ছাড়া কলকাতার বিভিন্ন দমকল কেন্দ্রে এখনও পর্যন্ত এই পরীক্ষা চালু হয়নি। দমকলকর্মীদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত কয়েক মাসে দেশের চার রাজ্যে কোভিড হাসপাতালে (পুণে, কটক, আমদাবাদ ও চেন্নাই) আগুন লেগেছিল। তার জেরে মানুষের মৃত্যুও হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতার একটি দমকল কেন্দ্রের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে কোভিড হাসপাতালগুলিতে আগুন লাগার মতো ঘটনা এড়াতে আগাম সুসংহত পরিকল্পনার দরকার। বিশেষত কোভিড হাসপাতালে ঢোকার নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিতে আগেই হাসপাতাল ও পূর্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দমকলের জরুরি বৈঠক ডাকা উচিত ছিল।’’
লোকবলের অভাব যে পুজোর সময়ে তাঁদের বড় পরীক্ষার মুখে ফেলবে, তা স্বীকার করে নিয়ে দমকলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকর্তা অভিজিৎ পাণ্ডে বলেন, ‘‘কর্মীর অভাব থাকলেও তো আমাদের বসে থাকলে চলবে না। পুজোর সময়ে বাড়তি নজরদারির দায়িত্ব নিতে আমরা পুরোপুরি তৈরি। দমকলকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই, স্যানিটাইজ়ার মজুত আছে।’’ বাকি অভিযোগও যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।