পরিযায়ী পাখির ভিড়। —ফাইল চিত্র।
শীত পড়ছে। এই মরসুমে প্রথম কালনার ছাড়িগঙ্গায় দেখা মিলল পরিযায়ী পাখিদের। শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, কালো ডানা আর লাল লম্বা পায়ের এক ঝাঁক পাখি খেলে বেড়াচ্ছে জলাশয়ে। পাখিপ্রেমীদের দাবি, এর নাম ব্ল্যাক উইঙড্ স্টিল্ট, অনেকে একে লাল ঠেঙি বলে। তাঁদের আশা এ বছর বহু পরিযায়ী পাখির দেখা মিলবে মহকুমার ছাড়িগঙ্গা, চুপি এবং বাঁশদহ বিলে। রঙিন পাখিদের দেখতে ঢল নামে পর্যটকেরও।
এ দিন সকাল থেকে পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক ধরে শীতে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে কালনা উপসংশোধনাগার লাগোয়া এই জলাশয়ে। গত বছর জলাশয়টির বেশির ভাগ অংশ কচুরিপানায় ঢেকে থাকায় পাখির সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। তবে এ বার সেই সমস্যা নেই। শীতের শুরুতে এই ধরনের পাখি আসা মানে আরও হাঁস জাতীয় বিভিন্ন পাখি এই জলাশয়ে আসার সবুজ সঙ্কেত বলে মনে করছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।
বন দফতরের কাটোয়ার রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিংহ বলেন, “আশা করা যাচ্ছে ডিসেম্বরের শুরুতে চুপির পাখিরালয়-সহ বেশ কিছু জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিরা চলে আসবে।”
পাখিপ্রেমী হিসেবে পরিচিত কালনা উপসংশোধনাগারের কন্ট্রোলার অর্পণজ্যোতি চক্রবর্তী এ দিন দীর্ঘ ক্ষণ দূরবীন নিয়ে জলাশয়ে পাখি দেখেন। তিনি বলেন, “ব্ল্যাক উইঙড্ স্টিল্টদের আগে এত সংখ্যায় দেখা যায়নি। ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকাতে এদের দেখা যায়। এরা জলে থাকতেই ভালবাসে।”
পাখি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত কালনার বাসিন্দা নব্যেন্দু পাল বলেন, “ক’দিন আগেই ছাড়িগঙ্গায় কয়েকটি লাল ঠেঙি দেখেছিলাম। এক ঝাঁক এসেছে শুনে ভাল লাগছে। এই প্রজাতির পাখি ভাসমান পোকা-মাকড় খায়। পুরুষ এবং মহিলা পাখিদের সঙ্গে দলে থাকে ধূসর রঙের বাচ্চা।”
এ দিন ছাড়িগঙ্গায় দেখা যায়, আশপাশের এলাকায় অনেকেই চাষের জমি তৈরি করছেন। কেউ কেউ এই জলাশয়ে জাল পেতে মাছও ধরছেন। চলছে নৌকায় যাতায়াতও। পাখিপ্রেমীদের দাবি, ওই এলাকায় চাষ বাড়লে কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রাও বাড়বে। তাতে পাখিদের মৃত্যু ঘটতে পারে। পাশাপাশি মাছ ধরা বা পিকনিক-সহ নানা কারণে স্থানীয় মানুষের যাতায়াত বাড়লে পাখিরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে উড়ে যেতে পারে। অনেকে ফাঁদ পেতে পাখি শিকারও করে বলে শোনা যায়। তাই প্রশাসনকে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
এ দিনই বিষয়টি নিয়ে কালনার মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল এবং উপ পুরপ্রধান তপন পোড়েল একটি বৈঠক করেন। উপ পুরপ্রধান বলেন, “পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ-সহ অন্য বিষয়গুলি নিয়েও সাধারণ মানুষকে সচেতন করে পুরসভা, মহকুমা প্রশাসন এবং বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে আলাদা আলাদা করে প্রচার চালানো হবে।”
এক পুর প্রতিনিধির দাবি, ছাড়িগঙ্গায় যারা মাছ ধরে তাদের একটি তালিকা করে পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। মহকুমাশাসক শুভম আগরওয়াল বলেন, “ছাড়িগঙ্গার পাশাপাশি চুপি পাখিরালয়েও পরিযায়ী পাখিরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করতে পারে, সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। চুপির জলাশয়ে জমে থাকা কচুরিপানা তোলার জন্য উদ্যোগী হচ্ছে সেচ দফতর।”