—ফাইল চিত্র।
তিনি এক সরকারি চিকিৎসকের দিদা। আর এক সরকারি চিকিৎসকের দিদি-শাশুড়ি। অভিযোগ, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে গত এক সপ্তাহ ধরে ওই বৃদ্ধাকে নিয়েই চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হল তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও। তাঁদের অভিযোগ, বৃদ্ধা যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখান থেকে তিনি বাড়িতেই থাকতে পারেন লিখে দেওয়া হলেও প্রতিবেশীদের বাধার মুখে তা সম্ভবই হয়নি। জরুরি সময়ে বৃদ্ধাকে ভর্তি করানোর মতো শয্যাও পাওয়া যায়নি হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে। শেষে বরাহনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল বৃদ্ধাকে ১৮ ঘণ্টা রাখার জন্য নিয়েছে প্রায় ৫২ হাজার টাকা!
করোনা অতিমারির এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষকেই বারবার ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেখানে চিকিৎসকের পরিবারেরও এই পরিস্থিতিতে পড়ার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে।
কাঁকুড়গাছির এক আবাসনের বাসিন্দা ওই পরিবারের দাবি, সত্তর বছরের ওই বৃদ্ধা ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভুগছেন। বৃদ্ধার নাতি শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজে চেস্ট মেডিসিনের হাউসস্টাফ। বৃদ্ধার নাতজামাই আবার শহরের আর এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে চলতি বছরে সার্জারির স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। তিনি বর্তমানে কৃষ্ণনগরের সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। দু’জনেই এত দিন বৃদ্ধাকে দেখলেও গত ৩১ জুলাই অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। যদিও ২ অগস্ট ছুটি দিয়ে বাড়িতেই আইসোলেশনে রাখার কথা লিখে দেয় ওই হাসপাতাল।
বৃদ্ধার নাতনির অভিযোগ, ‘‘শেষ পর্যন্ত তা করা যায়নি। কাঁকুড়গাছির আবাসনে আমাদের পাঁচটা ফ্ল্যাট। তার একটিতে দিদাকে রাখার ব্যবস্থা করেছিলাম। সার্টিফিকেট দেখালেও আবাসনের লোকজন কেউ তা মানতে চাননি। উল্টে আমার চিকিৎসক ভাইকে নানা ভাবে হেনস্থা করা হয়।’’ তিনি আরও জানান, গত মঙ্গলবার চরম হেনস্থার মুখে পড়ে পুলিশে ফোন করেন তাঁরা। মানিকতলা থানার পুলিশ গিয়ে প্রচুর বোঝালেও পাড়ার লোককে রাজি করানো যায়নি। এর পরে তাঁরা বৃদ্ধাকে হাসপাতালেই রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তবে হন্যে হয়ে ঘোরার পরেও কোথাওই শয্যা পাওয়া যাচ্ছিল না বলে ওই পরিবারের দাবি।
বৃদ্ধার নাতনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী এবং ভাই চিকিৎসক হওয়ায় ধারণা ছিল সুবিধা হবে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিচিতদের ফোন করা শুরু করে ওরা। কিন্তু কোনও বেসরকারি হাসপাতালই শয্যা দিতে পারেনি। শেষে আমার স্বামী সরকারি ওয়েবসাইট থেকে শয্যা দেখার চেষ্টা করে। তাতেও একটা ফর্ম পূরণ করে ২৪ ঘণ্টা উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু অত ক্ষণ দিদাকে নিয়ে কোথায় যাব ভেবে না পেয়ে বরাহনগরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে না গেলে বুঝতাম না, কী ভাবে টাকা লুটে নেওয়া হচ্ছে!’’
শেষে পরিচিতের সূত্রে বুধবার বৃদ্ধাকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো গিয়েছে বলে জানায় ওই পরিবার। বৃদ্ধার চিকিৎসক নাতি বললেন, ‘‘একটাই ভয়, এ সবের মধ্যে হাসপাতালে থেকে দিদিমার সংক্রমণ বেড়ে না যায়!’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বললেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। তবে প্রতিদিনই আমরা পর্যাপ্ত সংখ্যায় শয্যার ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। ওই ডাক্তার সাহেব কেন শয্যা পাবেন না? দ্রুত খোঁজ নিয়ে দেখছি। স্বাস্থ্য দফতরকেও ওই দুই চিকিৎসকের কেউ লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাতে পারেন।’’