—ফাইল চিত্র।
করোনায় মৃতদের দেহ বহনও এখন হয়ে উঠেছে নতুন এক ব্যবসা। ওই রোগে কেউ মারা গেলে সংক্রমণের ভয়ে দেহ ছুঁতে চান না অনেকেই। আর সেই সুযোগেই দেহ বহনের জন্য বিরাট অঙ্কের টাকা দাবি করছেন কিছু লোক।
বুধবার সন্ধ্যায় ফের এমনই অভিযোগ উঠল হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন থানা এলাকার কলেজ ঘাট রোডে। সেখানে করোনায় মৃত এক বৃদ্ধার দেহ চারতলার ফ্ল্যাট থেকে নীচে নামাতেই চাওয়া হল সাড়ে চার হাজার টাকা। বাড়ির লোকজন অত টাকা দিতে রাজি হননি। শেষে মৃতার ছেলেরাই মায়ের দেহ নীচে নামিয়ে শববাহী গাড়িতে তোলেন।
এর আগে গত ১৩ অগস্ট হাওড়ার দালালপুকুরের কাছে করোনায় মৃত এক বৃদ্ধার দেহ বাড়ি থেকে শ্মশানে নিয়ে যেতে ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন নিজেদের ‘ডোম’ বলে পরিচয় দেওয়া দুই যুবক। সেই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পরে কিছু দিন বন্ধ ছিল এই অমানবিক চাহিদা। কিন্তু বুধবার দেখা গেল, করোনা নিয়ে আতঙ্কের সুযোগে কিছু লোক চালিয়ে যাচ্ছেন এই ব্যবসা।
আরও পড়ুন: প্রদেশ কংগ্রেসের ভাগ্যে ফের ‘পরিযায়ী’ সভাপতি
আরও পড়ুন: মস্কোয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ।। আগে সেনা সরাক চিন: জয়শঙ্কর
মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কোভিডের উপসর্গ থাকায় কলেজ রোডের একটি আবাসনের বাসিন্দা, ৫৮ বছরের ওই প্রৌঢ়ার করোনা পরীক্ষা করানো হয় গত মঙ্গলবার। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগেই বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ নিজের বাড়িতে মারা যান তিনি। মৃতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট বুধবার বেলা পর্যন্তও না-আসায় শববাহী গাড়িতেই মায়ের দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তাঁর দুই ছেলে। সেই গাড়িও চলে আসে দুপুরে।
মৃতার এক ছেলে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘দুপুর ২টো নাগাদ মোবাইলে মেসেজ এলে জানতে পারি, মায়ের রিপোর্ট পজ়িটিভ। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানাই এবং সরকারি হেল্পলাইনে ফোন করে কোভিড-বিধি মেনে মৃতদেহ দাহ করার জন্য অনুরোধ করি।’’ মৃতার পরিবারের অভিযোগ, হেল্পলাইনে ফোন করার প্রায় দু’ঘণ্টা পরে বিকেল চারটে নাগাদ শববাহী গাড়ি আসে। সঙ্গে আসে পুলিশ এবং মোটরবাইকে চেপে আসেন দুই যুবকও। মৃতদেহ নীচে নামাতে পিপিই পরে চারতলায় ওঠেন তাঁরা।
মৃতার ছেলে বলেন, ‘‘ওই দুই যুবক মৃতদেহ দেখার পরেই জানতে চান, কে টাকা দেবে? আমি প্রশ্ন করি, কিসের টাকা? ওঁরা বলেন, মৃতদেহ নামাতে সাড়ে চার হাজার টাকা লাগবে। না হলে তাঁরা দেহ নামাতে পারবেন না।’’ বাড়ির লোকেরা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ওই দুই যুবক মোটরবাইক নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হন। তখন তাঁদের বলা হয়, দু’হাজার টাকা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ওই যুবকেরা তাতেও রাজি হননি। ওই পরিবারের অভিযোগ, গোটা ঘটনাটি পুলিশের সামনে ঘটলেও পুলিশ সাহায্য করা দূরের কথা, উল্টে তাঁদের ‘সমঝোতা’ করে নেওয়ার উপদেশ দেয়। কিন্তু বাড়ির লোকেরা অত টাকা দিতে রাজি হননি।
ওই পরিবারের দাবি, এই টানাপড়েনে প্রায় আট ঘণ্টা কেটে যাওয়ায় শেষে ছেলেরাই প্রৌঢ়ার দেহ নীচে নামিয়ে আনেন এবং পুরসভার পাঠানো গাড়িতে শেষকৃত্যের জন্য রওনা হন।
কিন্তু পুলিশের সামনে এমন দর কষাকষি হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন? হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। তা ছাড়া, পুলিশ ডোম পাঠায়নি। ডোম ও শববাহী গাড়ি পাঠিয়েছিল পুরসভা। তবে টাকা চাওয়ার অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভা নিখরচায় কোভিডে মৃতদের জন্য ডোম পাঠায়। বুধবারের ঘটনায় যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা সরকারি ডোম নন। তাঁরা কারা, তা জানি না।’’