Coronavirus in Kolkata

রাতে অভিযুক্ত রোগীর দিনে আত্মহত্যার চেষ্টা

দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির বাসিন্দা, বছর আটান্নর ওই প্রৌঢ় ১ অগস্ট থেকে জ্বরে ভুগছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০১:৩৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

রাতে এক বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল করোনা আক্রান্ত এক রোগীর বিরুদ্ধে। পরের দিন সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড থেকে সেই প্রৌঢ়ই ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। শনিবার যা ঘিরে তৈরি হল চাপান-উতোর।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির বাসিন্দা, বছর আটান্নর ওই প্রৌঢ় ১ অগস্ট থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। বুধবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁকে সেই রাতে একবালপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীকে আইসিইউয়ে রেখে চিকিৎসা চলছিল। ভর্তির পরদিন থেকেই বাড়ি যেতে চাইছিলেন রোগী। তাঁকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন পরিজনেরাও। সেই মতো শুক্রবার রাতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অভিযোগ, সেই রাতেই ওই বেসরকারি হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্মীকে মাথায় আঘাত করেন প্রৌঢ়। কর্তব্যরত এক নার্সকে তিনি গালিগালাজও করেন বলে অভিযোগ। ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত রোগীর পাশে থাকায় নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা তথা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজির।

যদিও এই ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ কিছুটা বিরক্ত। তাঁরা মনে করছেন, রোগীর বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ। অথচ তার নিষ্পত্তির আগেই রোগীর পক্ষ নিয়ে কথা বলে ঠিক কাজ করেননি নির্মল।

Advertisement

রাতের ওই ঘটনা এ দিন সকালে অন্য দিকে মোড় নয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি ব্লকের চারতলায় চিকিৎসাধীন ওই প্রৌঢ় রোগী কাচ ভেঙে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, ওয়ার্ড সংলগ্ন সিঁড়ির কাছের একটি জানলা ধাতব বস্তু দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছিলেন পেশায় শিক্ষক ওই করোনা রোগী। সেই সময়ে বৌবাজার থানার পুলিশ পিছনের রাস্তায় লকডাউনের ঘোষণা করছিল। হাসপাতাল থেকে কাচ ভাঙার আওয়াজ শুনেই মেডিক্যাল কলেজের ফাঁড়িতে খবর দেয় তারা। পিপিই পরার সুযোগও পাননি ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা। পিপিই হাতে নিয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা দেখেন, প্রৌঢ় রোগী জানলার ভাঙা কাচের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁকে বুঝিয়ে নিরস্ত করতে সক্ষম হন ওই পুলিশকর্মীরা। কিন্তু কোভিড ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীদের নজর এড়িয়ে রোগী সেখানে পৌঁছলেন কী ভাবে? সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতেও ওই হাসপাতালের সিবি-টপ থেকে এক মহিলা রোগী নীচে চলে যান।

এ সবের পিছনে অবশ্য বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক দিনেই বিলের পরিমাণ লক্ষাধিক টাকা হয়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন নির্মল। ঘটনাটি হল, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের এক প্রতিনিধিকে ফোন করেছিলেন তিনিই। নির্মলের দাবি, ‘‘ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে তবে ওই বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়তে রাজি হয়। যে অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীকে মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে সেটি ১৩০০০ টাকা ভাড়া নিয়েছে! এখন রোগী তো মেডিক্যালের জেনারেল ওয়ার্ডে রয়েছেন।’’ রোগীর এক পরিজনের দাবি, “ওই বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়া মাত্র কোনও কারণ ছাড়াই সোজা আইসিইউয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” স্বাস্থ্যকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন রোগীর ওই আত্মীয়।

ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, লক্ষাধিক টাকার বিল নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বুধবার থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত আইসিইউয়ে সাড়ে ৮১ হাজার টাকা বিল হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিল ডেস্কে টাকা মেটানোর সময়ে ওই রোগী এক স্বাস্থ্যকর্মীর মাথার পিছনে এত জোরে আঘাত করেন যে তাঁকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে পাঠাতে হয়। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মহিলা নার্সকে যে ভাষায় গালিগালাজ করেছেন তাতে মনে হয় না উনি শিক্ষক। এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement