প্রতীকী ছবি
পরিবার জানত, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহিলার মৃত্যু হয়েছে হৃদ্রোগে। প্রতিবেশী এবং পরিজনেরা মিলে প্রথা মেনে দাহকার্যও শেষ করেন। তারও পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে পরিবার জানতে পারে, ওই মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সে খবর সামনে আসতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিধাননগর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়।
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেব নস্কর জানান, ৯ মে বছর বিয়াল্লিশের ওই মহিলা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে লেক টাউন থানা এলাকার এক নার্সিংহোমে ভর্তি হন। ১২ মে সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিয়ম মেনে চার ঘণ্টা পরে দেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিবাহিতা ওই মহিলা বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করতেন। পরিজনেরা দেহ নিয়ে পাড়ায় ফিরে যান। শোক জানাতে সেখানে জড়ো হন স্থানীয় মানুষ। নিমতলা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হয়। তাতে যোগ দেন জনা তিরিশেক লোক।
মৃতার পরিবার সূত্রের খবর, শ্মশান থেকে ফিরেই হাসপাতালের ফোন পায় তারা। ঘর থেকে বেরোতে নিষেধ করা হয় পরিবারের সদস্যদের। বলা হয়, ওই মহিলার লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কাউন্সিলর জানান, অব্যবস্থার কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই মহিলার রিপোর্ট দেরিতে আসার যুক্তি দেখিয়েছেন। জয়দেবের প্রশ্ন, ‘‘রিপোর্ট আসতে সময় লাগতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কেন দেহ পরিবারের হাতে দিয়ে দেওয়া হল?’’ এর যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর দিতে পারেননি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। বুধবার ওই নার্সিংহোমের ম্যানেজার পদমর্যাদার এক আধিকারিক অসিতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি গত ৭-৮ দিন হাসপাতালে যাইনি। এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারব না।’’ হাসপাতালের তরফে কে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, তারও কোনও উত্তর দেননি তিনি। তবে এক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ওই নার্সিংহোমে মহিলার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশকে কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছে।
ঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় কাউন্সিলর খবর দেন বিধায়ক, পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে। বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় জানান, এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। মৃতার সরাসরি সংস্পর্শে আসা তাঁর ছেলে ও স্বামী-সহ পাঁচ জনকে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এমন ঘটনা কেন ঘটল, তা খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান মেয়র পারিষদ।
স্থানীয় বিধায়ক তথা দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। ওই এলাকা জীবাণুমুক্তও করা হয়েছে।’’