ক্রেতার অভাবে মেছুয়ার ফলপট্টিতে নষ্ট হচ্ছে ফল। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার উপরে স্তূপ হয়ে পড়ে পচা মুসাম্বি, কমলালেবু, আনারস। দোকানের প্রায় শুকিয়ে যাওয়া আঙুর-আপেল দেখলেই মালুম হবে রমরমা এই বাজারে ক্রেতার অভাবের করুণ দশা। লকডাউনের এক দুপুরে এটাই ছিল মধ্য কলকাতার কার্যত জনশূন্য মেছুয়া ফলপট্টির চিত্র।
ওই ফলপট্টিতে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে প্রচুর ফল আসে। লকডাউনের জন্য কমে গিয়েছে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা মালবাহী গাড়ির সংখ্যা। গাড়ি থেকে মালপত্র ওঠাতে-নামাতে প্রয়োজন অসংখ্য শ্রমিকের। করোনা-আতঙ্কে তাঁরা অনেকেই ফলপট্টি ছেড়েছেন। চেঙ্গিস খান নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, শ্রমিকের অভাব এই মুহূর্তে অন্য রাজ্যের ফল ব্যবসায়ীদের কাছেও মাথাব্যথার কারণ। তা ছাড়া, যেখানে ভিন্ রাজ্য থেকে আগে প্রতি সপ্তাহে ১০টি গাড়ি আসত, এখন সেখানে গড়ে দু’টি করে গাড়ি ঢুকছে। আরও অভিযোগ, অবস্থা বুঝে চড়া দর হাঁকছে পণ্যবাহী গাড়ি।
এমনি সময়ে ফলপট্টি থেকে ফল কিনে বিক্রেতারা পৌঁছে যান সারা শহর, এমনকি আশপাশের জেলার স্থানীয় বাজারে। এখন ট্রেন এবং অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ থাকায় ফলপট্টিতে আমদানি আটকে ব্যবসার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই মজুত থাকা ফল বিক্রি না হওয়ায় সেগুলিতে পচন ধরছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ফল ব্যবসায়ী মহম্মদ মুরতাজ বলেন, ‘‘বছরের এই সময়ে মুসাম্বি এবং আঙুরের খুব চাহিদা থাকে। সেগুলি তাই বেশি পরিমাণে আগেই মজুত করা ছিল। হঠাৎ করেই লকডাউন শুরু হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ ফল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ ফলপট্টির ব্যবসায়ীদের মতে, পাইকারি বাজাের ফল কম আসায় স্থানীয় বাজারে এর দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। মানিকতলার ফল বিক্রেতা রজনী দাম বলেন, ‘‘প্রতি চৈত্রে বিভিন্ন পুজোর জন্য ফলের চাহিদা থাকে। এ বার সেই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। মানুষ ঘরবন্দি থাকলেও ফলের চাহিদা মোটেও তলানিতে ঠেকেনি। কিন্তু ফলের জোগান কম থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে দাম।”
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যাঁরা ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রাক নিয়ে আসছেন, তাঁরা কতটা নিরাপদ? ‘মেছুয়া ফ্রুট মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি খুরশিদ আলম জানান, অন্য রাজ্য থেকে মালবাহী গাড়ি আসার সময়ে সীমানায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তবেই চালক এবং অন্য শ্রমিকেরা প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন। সেদিক থেকে তাই প্রশাসনের উপরে খানিকটা ভরসা করছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “মালপত্র ওঠাতে-নামানোর সময়ে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্যানিটাইজ়ার এবং মাস্ক কয়েক জনকে মাত্র দিতে পেরেছি। এখন এই বাজারে যে কয়েক জন শ্রমিক আছেন, পুরসভা তাঁদের কথা ভাবলে সকলের উপকার হবে।’’
স্থানীয় কাউন্সিলর ঋতা চৌধুরী জানান, ফলপট্টিতে করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে প্রচার হয়েছে। এত লোককে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার দেওয়া পুরসভার পক্ষে অসম্ভব। ব্যবসায়ীদের উপরে নির্ভর করছে, তাঁরা কী ভাবে সচেতন হবেন।