—ফাইল চিত্র।
কলকাতায় আরও এক তরুণের শরীরে করোনাভাইরাসের হদিস মিলল। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই তরুণ আপাতত বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তিনি গত ১৩ মার্চ লন্ডন থেকে ফিরেছিলেন। কাশি ও গলাব্যথা হওয়ায় পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে যান। বৃহস্পতিবার রাতে করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পরেই তরুণের পরিবার-পরিজন মিলিয়ে মোট ১৬ জনকে রাজারহাটের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের পারিবারিক চিকিৎসক নিজেই আইডিতে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর শরীরে এখনও কোনও উপসর্গ ধরা পড়েনি। তবে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ফেরা ওই তরুণের নিয়মমাফিক পরীক্ষা হয়েছিল। তখন তাঁর শরীরে কোনও উপসর্গ ছিল না। এর পর ১৫ তারিখ কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে তিনি পদ্মপুকুরে তাঁর পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক তাঁকে আইডিতে যেতে বলেন। তিন দিন পরে ১৮ মার্চ তরুণ আইডিতে যান। আক্রান্ত তরুণ আইডি-র চিকিৎসকদের জানান, তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে স্বেচ্ছা-গৃহবন্দি থাকার পরামর্শ দিয়ে তাঁর সঙ্গে বিদেশ থেকে ফেরা বন্ধুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেন। বৃহস্পতিবার ওই তরুণের বাবা আইডিতে গিয়ে জানান, তাঁর ছেলের সঙ্গে ফেরা দুই বন্ধুর এক জন চণ্ডীগড়, অন্য জন ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তখন তড়িঘড়ি ওই তরুণকে ভর্তি করে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে আইডি। রাতে ‘পজিটিভ’ রিপোর্ট আসে।
এর পর আইডি থেকে ওই তরুণের পারিবারিক চিকিৎসককে তাঁর রোগীর করোনা সংক্রমণের খবর জানানো হয়। শুনেই তিনি সটান হাসপাতালে চলে আসেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার বাকি রোগীরা যাতে সমস্যায় না-পড়েন, তাই নিজে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’’
দ্বিতীয় তরুণের গতিবিধি
• ১৩ মার্চ: লন্ডন থেকে কলকাতায় ফেরেন
• ১৫ মার্চ: কাশি-গলা ব্যথা নিয়ে পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে। তিনি আইডিতে যেতে বলেন।
• ১৮ মার্চ: আইডিতে গিয়ে জানালেন, তিনি স্বেচ্ছা-গৃহবন্দি রয়েছেন। চিকিৎসকেরা বন্ধুদের কী অবস্থা জানতে বললেন।
• ১৯ মার্চ: বাবা আইডিতে গিয়ে জানালেন, ছেলের দুই বন্ধু করোনা আক্রান্ত। ভর্তি করা হল তরুণকে। রাতে রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’।
• ২০ মার্চ: পরিবারের ১১ জনকে রাজারহাটে কোয়রান্টিনে পাঠানো হল। স্বেচ্ছায় আইডিতে ভর্তি হলেন পারিবারিক চিকিৎসক। তাঁর নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হল।
দুশ্চিন্তা কোথায়?
• আবাসনের বাইরে এক দোকানদারের দাবি, তিন দিন আগে তরুণ দোকানে গিয়েছিলেন। কালীঘাটে তরুণের বাবার অফিস এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তরুণ এসেছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, ১৭ তারিখ ৫ বন্ধুকে নিয়ে কফি শপে গিয়েছিলেন তিনি।
• আইডিতে তরুণ যাঁদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের কি চিহ্নিত করে পরীক্ষা করা হবে?
ওই তরুণ নিজেকে ‘বাড়ি-বন্দি’ রাখার কথা বললেও এ ব্যাপারে কলকাতা পুরসভাকে খোঁজ নিতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর। তরুণের বাবা ব্যবসায়ী। কালীঘাট এলাকায় তাঁর অফিস রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই তরুণ বাবার অফিসে গিয়েছিলেন। অফিসের কর্মী ও স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি তুলে থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুটকেসের সূত্র ধরেই বিলেত ফেরতের ‘রহস্যভেদ’
ওই তরুণ ১৮ তারিখ আইডিতে সবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে দিন হাসপাতালে আসা সব মানুষকে নজরদারির আওতায় আনা হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকে আইডিতে বিদেশ ফেরতদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা হয়েছে। ওই তরুণের আশেপাশের আসনের ২৯ জন যাত্রী ও বিমানকর্মী সম্পর্কে এয়ার ইন্ডিয়ার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তাঁর পাশে বসা যাত্রীকে ইতিমধ্যেই শনাক্ত করে আইডিতে ভর্তি করানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা মোট ৫১ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন।
বালিগঞ্জের যে আবাসনে তরুণটি থাকেন, সেখানে ২৫ তলার দু’টি বাড়ি রয়েছে। ২ নম্বর টাওয়ারের ১৪ তলায় একটি ফ্ল্যাটে বাবা, মা, ভাইয়ের সঙ্গে ওই তরুণ থাকেন। ওই তলার বাকি তিনটি ফ্ল্যাটে তাঁর আত্মীয়েরা থাকেন। এ দিন সকালেই আবাসন জীবাণুমুক্ত করেন পুরকর্মীরা। নিষিদ্ধ হয়েছে বহিরাগতের প্রবেশ। স্থানীয় বাসিন্দা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে।