লড়াই: বেসরকারি হাসপাতালে সেই বৃদ্ধের চিকিৎসার মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি রক্তে শর্করার পরিমাণও বেশি ছিল ৭১ বছরের বৃদ্ধের। শরীরে করোনার হানায় সঙ্কটজনক অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার ওই বাসিন্দা। টানা ২৪ দিন ভয়াল ভাইরাসের সঙ্গে যুঝে শেষ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। এর আগে দক্ষিণ কলকাতার এক সমাজকর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এক মাসেরও বেশি ভেন্টিলেশন থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন।
এম আর বাঙুর থেকে গত ২৪ এপ্রিল সল্টলেকের এইচসি ব্লকের বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ওই বৃদ্ধকে। একই পরিবারের দুই ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ছোট ভাইয়ের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও দাদাকে সঙ্কটজনক অবস্থায় ওই বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বৃদ্ধের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় তৎক্ষণাৎ তাঁকে বাইপ্যাপ দেওয়া হয়। তাতে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রোগীকে দিতে হয় ভেন্টিলেশনে।
পরদিন থেকে বৃদ্ধের চিকিৎসায় একের পর এক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রক্তচাপ কমে ‘সেপটিক শক’ দিয়ে বিপত্তির শুরু হয়। রক্ত যাতে জমাট না বাঁধে, তার জন্য রক্ত পাতলা করার ওষুধ দেওয়া হলে রোগীর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডায়ালিসিসের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সেই সঙ্কট মিটতে না-মিটতেই রোগীর হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, দু’দফায় ভেন্টিলেশনে দিতে হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন: জুনে চরম করোনার সংক্রমণ, আশার রেখা অক্টোবরে
শেষমেশ করোনার পাশাপাশি কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত ওই রোগী চিকিৎসায় সাড়া দিলে তাঁকে সপ্তাহখানেক আগে ভেন্টিলেটর থেকে বার করা হয়। সোমবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ওই বৃদ্ধ।
ওই বৃদ্ধই শুধু নন, এইচসি ব্লকের হাসপাতালে ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ়ের এক কোভিড পজ়িটিভ চিকিৎসককেও সম্প্রতি ভেন্টিলেশন থেকে বার করা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি এ ধরনের রোগীকে সুস্থ করতে হলে করোনা সম্পর্কে ভীতি কাটানো প্রয়োজন। সিসিইউ ইনচার্জ শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘করোনার ভয়ে রোগীর কাছে যাব না, এই মনোভাব নিয়ে চললে হবে না। পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিয়ে, পিপিই পরে কাছ থেকে পরিচর্যা করলে সঙ্কটজনক রোগীকেও ফেরানো যায়। আমাদের অভিজ্ঞতা অন্তত সে রকমই।’’
আরও পড়ুন: ওড়িশার ট্রেন বন্ধ, আসছে পশ্চিমের শ্রমিক স্পেশাল
আরও একটি পর্যবেক্ষণ রয়েছে ওই চিকিৎসকের। তাঁর বক্তব্য, রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্ত পাতলা করার ওষুধ প্রয়োগে সমস্যা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘যে হেতু আমাদের এখানে রোগী খুব কম, তাই নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এ নিয়ে বৃহত্তর পরিধিতে কাজ করা প্রয়োজন।’’
বেসরকারি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সুপ্রতিম নন্দী বলেন, ‘‘চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী— সকলে একটা টিম হয়ে কাজ না করলে এই রোগের মোকাবিলা করা মুশকিল।’’
চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের মধ্যে অহেতুক ভীতি যে করোনার মোকাবিলায় অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে, সে বিষয়ে একমত রাজ্যের প্রথম সারিতে থাকা একটি মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের বিভাগীয় প্রধানও। তাঁর কথায়, ‘‘সব ধরনের সুরক্ষা থাকলে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ রক্তক্ষরণের
বিপদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘করোনার চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে প্রতিনিয়ত যে সকল নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে, তা প্রত্যেকের জানা জরুরি। রক্তক্ষরণের বিপদ এড়াতে কী করণীয়, সেটা স্পষ্ট করে সেখানে বলা রয়েছে। এ বিষয়ে কিছু তথ্য ইতিমধ্যে নথিভুক্ত হয়েছে।’’