Coronavirus in Kolkata

পঁয়ত্রিশ দিন বয়সি যোদ্ধার কাছে নতজানু কোভিড ১৯

প্রায় ৩০ দিন ভর্তি থাকার পরে বুধবার সেই শিশুকেই ফিরিয়ে দেওয়া হল তার পরিবারের কাছে। 

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১৮
Share:

কোভিডজয়ী সেই শিশু।

৬ অগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর। লড়াই শেষে ঘরে এল ৩৫ দিনের বিজয়ী যোদ্ধা। সহজ ছিল না তার এই লড়াই। এই সময়ে সে পায়নি মায়ের স্পর্শ। চিরতরে হারাতে হয়েছে যমজ বোনকে। ১ কিলো ৩২০ গ্রাম ওজনের শরীরে সহ্য করতে হয়েছে কোভিড ১৯-এর আক্রমণ। তাই বাবা-মা, দাদু-দিদিমার সঙ্গে যুদ্ধজয়ী সেই শিশুপুত্র যখন ঘরের পথে রওনা দিচ্ছে, তখন তার ৩০ দিনের সঙ্গী স্বাস্থ্যকর্মীদের চোখও ভিজে যাচ্ছিল খুশিতে।

Advertisement

পরিবার সূত্রের খবর, ৫ অগস্ট রাত থেকেই পেটে ব্যথা শুরু হয়েছিল ওই শিশুর মায়ের। সঙ্গে রক্তপাতও হচ্ছিল। পরের দিন সোনোগ্রাফি করাতে গেলে গিরিশ পার্কের বাসিন্দা ওই মহিলার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। ৩১ সপ্তাহের মাথায় ওই প্রসূতি জন্ম দেন যমজ সন্তানের। এক জনের ৫০০ গ্রাম ও অন্য জনের ওজন ছিল ১ কিলো ৩০০ গ্রাম। দু’দিন পরে কোভিড পরীক্ষা করানো হয় মায়ের। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এর দিন চারেকের মাথায় ভেন্টিলেশনে থাকা কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়। সেই দিনই পুত্রসন্তানের কোভিড পরীক্ষা করা হলে তারও পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে। মা ও শিশুকে এর পরে দু’টি আলাদা বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মায়ের কোনও উপসর্গ না থাকায় তাঁকে ছেড়ে দেয় হাসপাতাল। ১৪ দিন হোম আইসোলেশনে থাকার পরে ৩০ অগস্ট ফের পরীক্ষা করালে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ওই দিন শিশুটিরও চতুর্থ বারের কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। প্রায় ৩০ দিন ভর্তি থাকার পরে বুধবার সেই শিশুকেই ফিরিয়ে দেওয়া হল তার পরিবারের কাছে।

আনন্দপুরের ফর্টিস হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই সদ্যোজাতকে ভর্তির ন’দিন পরে দ্বিতীয় পরীক্ষা ও তার পরে আরও একটি পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছিল। শেষ রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও তাকে ছেড়ে দেওয়ার পথে বাধা হয় হৃৎপিণ্ডের অতিরিক্ত গতি, চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ট্র্যাকিকার্ডিয়া। হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানাচ্ছেন, শরীরে কোনও যন্ত্রণা বা সংক্রমণ থাকলে ট্র্যাকিকার্ডিয়া হয়। শিশুটির ক্ষেত্রে রক্তের বিশেষ কিছু পরীক্ষায় গোলমাল ধরা পড়ে। সেই সঙ্গে ইসিজি রিপোর্টেও অস্বাভাবিকতা ছিল। সব দেখে চিকিৎসকেরা বোঝেন যে হৃৎপিণ্ডের সমস্যা থেকেই তার ট্র্যাকিকার্ডিয়া হচ্ছে। চিকিৎসকের মতে, “সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয়। তাতে খুব ভাল সাড়া দিয়েছে লড়াকু শিশুটি। এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ সুস্থ সে। তবে নিয়মিত চেক আপ করাতে হবে।” চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, ‘‘শিশুটিকে যখন আনা হয়েছিল তখন তার শ্বাসকষ্ট ছিল। দিন তিনেক সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হয়েছিল। তার পরেও কোভিডের জন্য ১৮ দিন টানা অক্সিজেন দিতে হয়েছে।’’

Advertisement

কোভিড যে শিশুদের হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করছে, সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে সেই তথ্য। তবে কোভিড সব শিশুর ক্ষেত্রে একই রকম ভাবে প্রভাব ফেলবে, তেমনটা মনে করছেন না শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তাঁর মতে, “এতটুকু শিশুর এই লড়াই সত্যিই উল্লেখযোগ্য। তবে সময়ের আগেই শিশুটির জন্ম হয়েছিল, তাই কোভিডের জন্যই যে ট্র্যাকিকার্ডিয়া হয়েছিল, সেটা বলা মুশকিল। তা ছাড়া গবেষণায় নিত্যনতুন তথ্য উঠে আসবে। সেটা যে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়। সুতরাং এ ভাবেই লড়াই করতে হবে সবাইকে।”

৩ সেপ্টেম্বর থেকে হাসপাতালে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে আসছিলেন মা। কোলে তুলে এ দিন শুধুই হাত বুলিয়ে ছেলের গায়ের গন্ধ শুঁকছিলেন। সেই গন্ধে যেন আরও এক জনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন তিনি।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement