সাহায্য: চেক দিচ্ছেন মিহিরকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং মঞ্জুষা দাশ ঘোষ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
এক জন শতবর্ষের দোরগোড়ায়। অন্য জনের ৮২। দু’জনেই মন্বন্তর দেখেছেন। তাই করোনা-যুদ্ধে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এলেন তাঁরা। রাজ্য সরকারের ত্রাণ তহবিলে এক জন ৯০ হাজার এবং অপর জন ১ লক্ষ টাকা দান করলেন।
মঙ্গলবার সল্টলেকের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ওই দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও স্থানীয় কাউন্সিলর তুলসী সিংহরায়ের হাতে চেক তুলে দেন। পাশাপাশি, এ দিন ইবি ব্লকে ‘সিপিডব্লিউডি কোয়ার্টার্স রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ওই ওয়ার্ড থেকে এ দিন মোট দু’লক্ষ ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় দমকলমন্ত্রীর হাতে।
এর আগেও সল্টলেকে এমন নজির দেখা গিয়েছিল। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্কুলের এক অস্থায়ী কর্মী যৎসামান্য বেতন হওয়া সত্ত্বেও ত্রাণ তহবিলে দান করেছিলেন।
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চিকিৎসক সংগঠনগুলো
৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিহিরকুমার চট্টোপাধ্যায় আগামী জুন মাসে ১০০ বছরে পা দেবেন। তিনি রাজ্যের পূর্ত দফতরের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার। প্রতি মাসের পেনশন থেকে জমানো ৯০ হাজার টাকা ত্রাণ তহবিলে তুলে দেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মন্বন্তর দেখেছি। ‘ফ্যান দাও’ বলতে বলতে মানুষকে মরে পড়ে থাকতে দেখেছি।’’ বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ, বিশেষত তাঁর মতো প্রবীণ যাঁরা, তাঁরা সমস্যায় আছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই এমন ভাবনা।
একই ভাবে ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা, বছর বিরাশির মঞ্জুষা দাশ ঘোষ জানান, মন্বন্তর দেখার অভিজ্ঞতা তাঁরও রয়েছে। মানুষকে বিপদে পড়তে দেখলে তিনি সাধ্যমতো সাহায্য করেন। কিন্তু করোনাভাইরাস এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তিনিও পেনশনের টাকা থেকেই অর্থসাহায্য করে মানুষের পাশে দাঁড়ালেন। তাঁর স্বামী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন।
আরও পড়ুন: ভুল করে কোভিড রোগীকে বাড়ি পাঠাল বাঙুর! ফের নিয়ে যেতেই মৃত্যু
স্থানীয় কাউন্সিলর জানান, বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা কেউই তাঁদের দান নিয়ে প্রচার চাইছিলেন না। কিন্তু ওঁদের কথা শুনে অন্যেরাও যাতে ত্রাণ তহবিলে দান করতে উৎসাহী হন, তার জন্যই বিষয়টি গোপন রাখা হয়নি।
দত্তাবাদের বাসিন্দা জয়দেব খন্ডিকার অবশ্য এই প্রবীণ ও প্রবীণার তুলনায় আর্থিক ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে। স্ত্রী, সন্তান ও মাকে নিয়ে কোনও মতে দিন গুজরান করেন তিনি। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে একটি স্কুলের অস্থায়ী কর্মী জয়দেব সম্প্রতি স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে ত্রাণ তহবিলে ১০১ টাকার চেক দিয়েছেন। জয়দেবের কথায়, ‘‘আমি হয়তো দু’দিনের বাজার খরচটুকুই দিয়েছি। কিন্তু অসংখ্য মানুষ দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই আমার যৎসামান্য টাকা যদি কোনও কাজে লাগে, তাই দিলাম।’’ কাউন্সিলর বলেন, ‘‘জয়দেববাবুর অনুদান শুধু আমাকে নয়, সকলকে উৎসাহ দেবে।’’
দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে মানুষ যে ভাবে সাড়া দিচ্ছেন, তাতে আমরা আপ্লুত। বিশেষত, প্রবীণদের সহযোগিতা সকলকে উৎসাহিত করবে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)