একটি জেলে মাস্ক তৈরি করছেন এক বন্দি। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মোকাবিলায় এ বার এগিয়ে এলেন বন্দিরাও। তাঁরা তৈরি করছেন মাস্ক। ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু হয়েছে রাজ্যের আটটি সেন্ট্রাল জেলে।
সরকারি হাসপাতাল থেকে খোলা বাজার— সর্বত্র এখন মাস্কের বিপুল চাহিদা। আতঙ্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সেই চাহিদাও। কিন্তু, পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় অনেক বেশি দামে মাস্ক বিকোচ্ছে। আতঙ্কের আবহে তাতেও আপত্তি করছেন না ক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে মাস্কের জোগান দিতে শুরু করলেন বন্দিরা।
উল্লেখ্য, রাজ্যের আটটি সেন্ট্রাল জেলেই পোশাক তৈরি করেন প্রশিক্ষিত বন্দি-দর্জিরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাক তৈরি বন্ধ করে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছেন ওঁরা।
কারা দফতর সূত্রের খবর, মাস্ক তৈরির কাজ প্রথম শুরু হয়েছে বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে। গত শুক্রবার থেকে ওই কাজে হাত লাগিয়েছেন সেখানকার বন্দিরা। মঙ্গলবার থেকে মাস্ক তৈরি শুরু হয়েছে দমদম জেলে। বুধবার সেখানকার বন্দিরা সহকর্মীদের তৈরি মাস্ক ব্যবহারও করেছেন। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মাস্কের নমুনা এ দিনই কারা দফতরে পৌঁছেছে। পাশাপাশি বারুইপুর, জলপাইগুড়ি, মেদিনীপুর, বর্ধমান, বালুরঘাট জেলেও চলছে মাস্ক তৈরির কাজ। মাস্ক প্রস্তুতকারক প্রতিটি জেল থেকে নমুনা পৌঁছচ্ছে কারা দফতরে। দফতরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই সেই মাস্ক ব্যবহারযোগ্য হবে বলে জানাচ্ছেন কারাকর্তাদের একাংশ।
বন্দিদের হাতে তৈরি মাস্ক তাঁদের সহকর্মীরা যেমন ব্যবহার করবেন, তেমনই ধাপে ধাপে আমজনতাও তা ব্যবহার করতে পারবে। এক কারাকর্তার কথায়, ‘‘উন্নত মানের কাপড় থাকায় যথেষ্ট ভাল মাস্ক তৈরি হচ্ছে। দফতর যে ভাবে নির্দেশ দেবে, সে ভাবেই এই মাস্ক বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছনো হবে।’’
সম্প্রতি একটি সেন্ট্রাল জেল থেকে চিকিৎসার জন্য কয়েক জন বন্দিকে হাসপাতালে পাঠান জেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বন্দিদের কেন মাস্ক পরা নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক। এমনকি, চিকিৎসা করতে অস্বীকারও করেন তিনি। এমন কোনও সমস্যায় এ বার লাগাম দেওয়া যাবে বলে দাবি এক কারাকর্তার।
প্রাথমিক ভাবে আটটি জেল মিলিয়ে প্রতিদিন দু’হাজার মাস্ক তৈরির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কারা দফতর। যদিও কয়েকটি জেলের কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘আমাদের যা-ই লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হোক না কেন, সেটা পূরণ করতে পারব।’’ বিভিন্ন জেলেই বন্দিদের নিয়ে নানা ধরনের কাজকর্ম করে থাকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। তবে করোনাভাইরাসের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন সেই সব সংস্থার প্রতিনিধিরা কারাগারে যাচ্ছেন না। ফলে অন্য সব কাজও সে ভাবে হচ্ছে না। তাই আরও বেশি বন্দিকে কাজে লাগিয়ে মাস্কের জোগান বাড়ানো যাবে বলেই মত কারাকর্তাদের একাংশের। এই প্রসঙ্গে কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্ত বলেন, ‘‘জেলে মাস্ক তৈরি করছেন বন্দিরা।’’ কেরল, মধ্যপ্রদেশেও সেখানকার স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী মাস্ক তৈরির কাজে হাতে লাগিয়েছেন বন্দিরা।