Coronavirus

করোনা-সতর্কতা নেই শহরের কোনও ছাত্রাবাসে

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী আবাসের মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা গেল, হবু ডাক্তারেরা হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ঘুরে এসে হস্টেলে ঢুকছেন হাত-মুখ না ধুয়েই।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০২:৫০
Share:

অসচেতন: এন আর এসের জুনিয়র চিকিৎসক (বাঁ দিকে) ও নার্সদের হস্টেলের প্রবেশপথে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নেওয়া হয়নি কোনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য জুড়ে সতর্কতা জারি হলেও শনিবার শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে দেখা গেল, সতর্কতার লেশমাত্রও নেই পড়ুয়াদের কোনও হস্টেলে!

Advertisement

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী আবাসের মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা গেল, হবু ডাক্তারেরা হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ঘুরে এসে হস্টেলে ঢুকছেন হাত-মুখ না ধুয়েই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘এক জন ডাক্তারির ছাত্রী হয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, তা আমাদের সকলেরই ভাল করে জানা। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, হস্টেলে ঢোকার মুখে স্যানিটাইজার থাকবে না কেন?’’ একই ছবি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের আবাসেও। বছরের অন্যান্য দিনের মতোই ছাত্রাবাসে ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন পড়ুয়ারা। প্রবেশপথে বসে এক নিরাপত্তারক্ষী। বললেন, ‘‘কলেজের তরফে আমাদের কাছে এখনও কোনও সতর্কবার্তা আসেনি। কোনও স্যানিটাইজারও দেওয়া হয়নি।’’ ওই হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কথায়, ‘‘প্রতিটি হস্টেলে ঢোকার মুখে স্যানিটাইজার রাখার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। মজুত করা স্যানিটাইজার এখন থেকেই ব্যবহার করলে বিপদের সময়ে তা পাওয়া মুশকিল হবে। তা ছাড়া, এখানে মাস্ক পরার বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি।’’

প্রায় একই পরিস্থিতি আর জি কর, এন আর এস, ন্যাশনাল মেডিক্যাল থেকে শুরু করে এসএসকেএম হাসপাতালের ছাত্রাবাস ও নার্সিং হস্টেলগুলির। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘নোভেল করোনাভাইরাস এখন আমাদের দেশেও ঢুকে পড়েছে। সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে। ছাত্রাবাসে বিভিন্ন রাজ্যের পড়ুয়ারা থাকেন। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে হাসপাতাল লাগোয়া হস্টেলের গেটে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে স্যানিটাইজার ও ন্যাপকিন রাখাটা খুব জরুরি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোলই নেই।’’ দাবি মেনে নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল ও নার্সিং কলেজের হস্টেলের গেটে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে স্যানিটাইজার ও ন্যাপকিন থাকবে। সংশ্লিষ্ট রক্ষী পড়ুয়াদের হাতে ওই স্যানিটাইজার দেবেন।’’

Advertisement

একই ধরনের উদাসীনতা চোখে পড়ল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ টাউন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের হস্টেলের পাশেই ছাত্রীদের হস্টেল। গণিতের ছাত্র রকিম শেখের অভিযোগ, ‘‘করোনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে ছাত্রাবাসে সচেতনতামূলক কোনও বার্তা পাঠানো হয়নি। প্রায় ৬০০ জন ছাত্রের মধ্যে অনেক বিদেশিও রয়েছেন। হস্টেলে ঢোকার মুখে হাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়।’’ আলিয়ার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী অ্যাগনেস আফরিদার কথায়, ‘‘হস্টেলে প্রায় চারশো ছাত্রী থাকেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গার ছাত্রীরা এখানে আছেন। করোনা ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা দরকার।’’ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহম্মদ আলি বললেন, ‘‘হস্টেলে স্যানিটাইজার রাখা হবে।’’

শিয়ালদহে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল হস্টেলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে শুধু একটি নোটিস ঝুলছে সতর্কবার্তা হিসেবে। এক আবাসিক ছাত্রের কথায়, ‘‘শুধু নোটিস ঝুলিয়ে দায় এড়াচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।’’ হস্টেল সুপার কর্ণশেখর মিস্ত্রি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement