প্রতীকী চিত্র।
বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ভারতে কোভিড ১৯-এ মৃত্যুহার অনেক কম, সংক্রমণের শুরু থেকেই তা বলে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো বটেই, অন্য শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীরাও একাধিক বার এই দাবি করেছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানিয়েছেন, শুরুতেই সংক্রমণকে চিহ্নিত করা এবং এর চিকিৎসা করায় মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে। যা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সাফল্য’ বলেও দাবি তাঁদের। কিন্তু সেই দাবি কতটা যথার্থ, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশ।
তাঁদের বক্তব্য, শুধু মৃত্যুহার দিয়ে কখনওই সংক্রমণের সামগ্রিক তীব্রতা বোঝানো সম্ভব নয়। কারণ মৃত্যুহার নির্ভর করে বয়স, কো-মর্বিডিটি, জনগোষ্ঠীর বয়সভিত্তিক অনুপাত-সহ একাধিক বিষয়ের উপরে। ফলে সেগুলিকে ব্রাত্য রেখে শুধুই মৃত্যুহারের উল্লেখ করে কোভিডের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সাফল্যের দাবির খুব একটা ভিত্তি নেই। মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুখেন্দু মণ্ডল বলছেন, ‘‘মৃত্যুহার কম হওয়ার বিষয়টি বার বার উল্লেখ করা হচ্ছে হয়তো দু’টি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। প্রথমত এই আশ্বাস দিতে যে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নয়তো মানুষকে বোকা বানাতে।’’ সম্প্রতি একটি মার্কিন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘দ্য ন্যাশনাল বুরো অব ইকনমিক রিসার্চ’-এ (এনবিইআর) প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রও সরকারি পরিসংখ্যান কতটা ঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মিনু ফিলিপ, এস সুব্রহ্মণ্যন এবং দেবরাজ রায়— এই তিন গবেষক তাঁদের ‘ডিকোডিং ইন্ডিয়া’জ লো কোভিড- ১৯ কেস ফেটালিটি রেট’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে তথ্য সহকারে ভারত-সহ ১৪টি দেশের মৃত্যুহারের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছেন। ২০ জুন, ১০ জুলাই এবং ৩০ জুলাই— এই ক্রমসরণিতে ওই দেশগুলির সিএফআর কত ছিল, তা দেখানো হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ শুরুর দিকে যেখানে বিশ্বে কোভিডে মৃত্যুহার ছিল ৭ শতাংশ, সেখানে জুলাইয়ের শেষে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশে। ভারতে এই পরিসংখ্যান যথাক্রমে ৩ এবং ২.২ শতাংশ (কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমান মৃত্যুহার ১.৬ শতাংশ)।
আরও পড়ুন: কাজ গিয়েছে করোনায়, মাথায় হাত ডেকরেটরদের
অন্য দেশের তুলনায় ভারতের মৃত্যুহার কমের পিছনে মূলত তিনটি কারণের উল্লেখ করছেন তাঁরা। তিন জনের প্রতিনিধি হিসেবে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিনু ফিলিপ আনন্দবাজারকে জানান, দেশে যুবগোষ্ঠীর তুলনামূলক সংখ্যাধিক্য, কোভিডে সংক্রমিত হওয়া ও মৃত্যুর মধ্যে সময়ের ফারাক (যার ফলে মৃত্যুহারে প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন ঘটছে না) এবং সব মৃত্যুর খবর ‘রিপোর্টেড’ না হওয়ার জন্যই দেশের মৃত্যুহার কম দেখাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কম মৃত্যুহারের উপরে ভিত্তি করে প্রশংসা করা হলে ভুল হবে। কারণ অন্য দেশের তুলনায় কোভিড নিয়ন্ত্রণে ভারত পুরো সফল, তা বলা যাবে না। তবে একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করতে চাই, এ বিষয়ে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা নীতি নির্ধারকদের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু বলার নেই।’’ বয়সভিত্তিক সংক্রমিত ও মৃত্যুর পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য অবস্থান স্পষ্ট করে আগেই জানিয়েছে, এই মুহূর্তে কোভিডের মৃত্যুহারের বিষয়টি বলা সম্ভব নয়। কারণ, সংক্রমণ এখনও থামেনি। ফলে সব ‘রিপোর্টেড’ কেসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফলাফলে পৌঁছনো যায়নি। এক গবেষকের কথায়, ‘‘যতক্ষণ না মোট সংক্রমিত ও মোট মৃতের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ মৃত্যুহার বলা সম্ভব নয়। বড়জোর একটা আভাস দেওয়া যায়।’’ মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মৃত্যুহার কম হওয়ার পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও অবদান নেই। ভারতীয় জনগোষ্ঠীর জিনগত কাঠামো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা-সহ একাধিক বিষয়ই এর প্রকৃত কারণ।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)