Kolkata Flat

অনুমোদিত নকশা ও নির্মাণের মধ্যে ফারাক থাকছে! সমস্যা সমাধানে কয়েক দফা পদক্ষেপ চায় পুরসভা

নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, মাটির বৈশিষ্ট না বুঝে ভিত তৈরি করা, পর্যাপ্ত সাপোর্ট না রাখা এবং খারাপ নকশার কারণে ভবনগুলি নির্মাণের পর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৭
Share:

—ফাইল ছবি।

কলকাতায় একের পর এক বহুতল হেলে পড়ার ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। বাঘাযতীনের ঘটনায় কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ তদন্ত শুরু করে। এর পর ট্যাংরা, এন্টালি, তপসিয়া, কসবা, ভবানীপুর-সহ একাধিক জায়গায় বহুতল হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। পুরনো বাড়িগুলির ক্ষেত্রে কাঠামোগত দুর্বলতা স্বাভাবিক কারণ হলেও, নবনির্মিত বহুতলের নির্মাণে ত্রুটি এবং বেআইনি ভাবে প্রকল্প রূপায়ণ বড় কারণ হিসeবে উঠে এসেছে। কলকাতায় আবাসন প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণের মান বজায় রাখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। দ্রুত বিক্রির উদ্দেশ্যে অনেক প্রোমোটার তড়িঘড়ি নির্মাণকাজ শেষ করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করছেন। গুণগত মান যাচাই না করেই বহু বাসিন্দা সেই সব ফ্ল্যাটে বসবাসও শুরু করছেন, যা পরবর্তী কালে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের তদন্তে উঠে এসেছে, নকশা অনুমোদনের সময় নির্দিষ্ট কাঠামোগত নিয়ম মানা হলেও নির্মাণের সময় সেই মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না।

Advertisement

নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, মাটির বৈশিষ্ট্য না বুঝে ভিত তৈরি করা, পর্যাপ্ত সাপোর্ট না রাখা এবং খারাপ নকশার কারণে ভবনগুলি নির্মাণের পর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে। তার জেরে শুধু হেলে পড়াই নয়, ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। হেলে পড়া বাড়ি নিয়ে শহরবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। একাধিক এলাকা থেকে হেলে পড়া বাড়ির অভিযোগ জমা পড়ছে পুরসভায়। অনেকেই পুরসভার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছেন। তবে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা বলছেন, “নির্মাণের সময় যদি ফ্ল্যাটের ক্রেতারা বা প্রোমোটারেরা আরও সতর্ক হতেন, তবে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো যেত।”

তবে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টাও চলছে। পুরসভা ইতিমধ্যে কয়েকটি বহুতল নির্মাণের নকশা পরীক্ষা করে দেখেছে এবং বিপজ্জনক ভবনগুলির বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু শহরে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটায় প্রশাসনিক স্তরেও চাপ বাড়ছে। এ সমস্যার মূল কারণ হল, নির্মাণ খাতে পর্যাপ্ত নজরদারি ও জবাবদিহির অভাব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানার উপর কোনও কঠোর নজরদারি থাকে না। অনুমোদিত নকশা ও বাস্তব নির্মাণের মধ্যে ফারাক থেকে যাচ্ছে।

Advertisement

এই সমস্যার সমাধানে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলেই মনে করছে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের একাংশ। প্রথমত, পুরসভাকে কঠোর ভাবে নির্মাণসামগ্রী ও কাজের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত প্রোমোটার নিয়মভঙ্গ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয়ত, পুরসভাকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নবনির্মিত বহুতলগুলির স্থিতিশীলতা যাচাই করতে হবে। চতুর্থত, ফ্ল্যাট কেনার আগে বাসিন্দাদেরও নির্মাণের গুণমান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নির্মাণকালীন পর্যবেক্ষণে অংশ নেওয়া উচিত। পঞ্চমত, যে সব বাড়ি অনেক পুরনো হয়ে গেছে, সেগুলির কাঠামোগত শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে।

কলকাতায় বহুতল হেলে পড়ার ঘটনা নগরোন্নয়নের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এটি শুধুমাত্র নির্মাণ-ত্রুটির ফল নয়, বরং অনিয়ন্ত্রিত আবাসন খাতের এক প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই প্রশাসন, নির্মাতা এবং বাসিন্দাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে কলকাতা পুরসভা এলাকায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement