— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এক দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, মোবাইল আনতে পারবে না পড়ুয়ারা। অন্য দিকে, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ বলেছে, একাদশ শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বই এখনও প্রকাশিত না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা ওই দু’টি বিষয়ের বই সংসদের ওয়েবসাইট থেকে মোবাইলে ডাউনলোড করে পিডিএফ মাধ্যমে পড়তে পারবে। আর ঠিক এখানেই শিক্ষকদের প্রশ্ন, ওয়েবসাইট থেকে বই ডাউনলোড করে পড়ার জন্য তো পড়ুয়াদের সঙ্গে মোবাইল থাকা প্রয়োজন। তা হলে তারা কি স্কুলে মোবাইল আনবে? সেই অনুমতি কি তাদের দেবেন শিক্ষকেরা?
উল্লেখ্য, একাদশের বাংলা ও ইংরেজির বই স্কুল থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই বই প্রকাশ করতে পারেনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সম্প্রতি তারা একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, বাংলা এবং ইংরেজির বই তাদের ওয়েবসাইটে পিডিএফ মাধ্যমে দেওয়া আছে। যত দিন না পড়ুয়ারা বই পাচ্ছে, তত দিন শিক্ষকেরা ক্লাসে সংসদের ওয়েবসাইট থেকে বই ডাউনলোড করে পড়াতে পারবেন।
বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির এক শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মোবাইলে সংশ্লিষ্ট বইটি বা তার প্রয়োজনীয় অংশ ডাউনলোড করে পড়াতে গেলে তো পড়ুয়াদের কাছেও মোবাইল থাকা দরকার। তা না হলে কতটা অংশ পড়ানো হল, সেটা তারা বুঝবে কেমন করে? এ দিকে, স্কুলে ফোন আনার কথাও আমরা পড়ুয়াদের বলতে পারব না। তা হলে কী ভাবে পঠনপাঠন চলবে?’’
একই প্রশ্ন পড়ুয়াদেরও। তাদের মতে, ক্লাসে স্যরেরা কতটা পড়ালেন, সেটা সঙ্গে মোবাইল না থাকলে বোঝা সম্ভব নয়। তাই পিডিএফ মাধ্যমে পড়ার জন্য স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া জরুরি। শিক্ষকদের একাংশ এ-ও বলছেন, অনেক গরিব পড়ুয়ার বাড়িতে একটিই মোবাইল থাকে। সেই ফোন হয়তো তাদের মা-বাবা কাজে নিয়ে যান। এমন পড়ুয়াদের পক্ষে কী ভাবে ক্লাসে মোবাইল থেকে পিডিএফ মাধ্যমে পড়া সম্ভব?
‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এমন নির্দেশে শিক্ষকেরা পড়েছেন উভয়সঙ্কটে। স্কুলে যে হেতু মোবাইল আনা বারণ, তাই শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের বলতে পারবেন না, তারা মোবাইল নিয়ে আসুক। আবার, সঙ্গে মোবাইল না থাকলে কতটা অংশ পড়ানো হল, সেটা বোঝাও সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে একমাত্র যদি সংসদ পড়ুয়াদের মোবাইল আনার অনুমতি দেয়, তা হলেই তারা মোবাইল নিয়ে স্কুলে আসতে পারে।’’
যদিও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাংলা এবং ইংরেজি বই দ্রুত পেয়ে যাবে পড়ুয়ারা। ছাপার কাজ সম্পূর্ণ। যত দিন তারা বই পাচ্ছে না, তত দিন শিক্ষকেরা ক্লাসে মোবাইলে বই ডাউনলোড করে পড়াবেন। পড়ুয়ার সেটি যতটা সম্ভব খাতায় নোট করে নেবে। এর পরে বাড়িতে মোবাইল দেখে সেটি পড়বে।’’
যদিও শিক্ষকদের বড় অংশের প্রশ্ন, পড়ুয়াদের কেন এত ঝামেলা পোহাতে হবে? কেন এখনও পর্যন্ত বাংলা এবং ইংরেজি বই তাদের হাতে তুলে দেওয়া গেল না? তা হলে তো পিডিএফ মাধ্যমে বই ডাউনলোড করে পড়ার প্রশ্ন উঠত না।’’ সংসদ সভাপতি অবশ্য বলেন, ‘‘একাদশ এবং দ্বাদশের পরীক্ষা সিমেস্টার পদ্ধতিতে হবে বলে পাঠ্যবইয়ে প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে বই ছাপতে হচ্ছে। তাই একটু সময় লাগছে। তবে আমরা দ্রুত দু’টি বিষয়ের বই প্রকাশ করব।’’