উঠে আসছে ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন প্রসঙ্গও ফাইল চিত্র
প্রশাসনিক রদবদল ঘিরে পর পর বিভ্রান্তি! একের পর এক নির্দেশিকায় নাম বদলের হিড়িকে যা ছড়িয়েছে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায়। যার সূত্রে উঠে আসছে ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন প্রসঙ্গও।
পুরসভা সূত্রের খবর, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে ১৬ অগস্ট এক নির্দেশিকায় রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য তাপস চক্রবর্তী বলে এক জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ১৯ অগস্ট তাপস চক্রবর্তীর জায়গায় ‘তাপস চট্টোপাধ্যায়’ নাম উল্লেখ করে আরও একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়। ২৭ অগস্ট ফের তাপস চট্টোপাধ্যায়ের নামের জায়গায় ‘অশোক চট্টোপাধ্যায়’ হবে বলে তৃতীয় নির্দেশিকা আসে।
রাজপুর-সোনারপুর পুর কর্তৃপক্ষ জানান, তাপস চক্রবর্তী নামে কোনও ব্যক্তি পুর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। পরে তাপস চট্টোপাধ্যায় নামেরও কেউ যোগাযোগ করেননি। সম্প্রতি পুরসভার প্রশাসনিক অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সোনারপুর এলাকার বাসিন্দা তাপস চট্টোপাধ্যায় নামে এক আইএনটিটিইউসি নেতা। তিনি তাপস চট্টোপাধ্যায় ওরফে অশোক বলে আদালতের একটি হলফনামা জমা দিয়ে যান। এর পরেই তৃতীয় নির্দেশিকাটি আসে।
এ প্রসঙ্গে বিরোধী বিজেপির অভিযোগ, এটা নাম বিভ্রাট নয়। আসলে কসবার ভুয়ো আইএএস অফিসার দেবাঞ্জন দেবের প্রতিষেধক কাণ্ডে জড়িত তাপস চট্টোপাধ্যায় নামের ওই শ্রমিক নেতাকে নাম বদলের মাধ্যমে আড়াল করে পুর প্রশাসক পদে বসানো হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পূর্ব) জেলার বিজেপি সভাপতি সুনীপ দাসের অভিযোগ, “দেবাঞ্জনকে সঙ্গে নিয়ে সোনারপুর স্টেশন এলাকায় শিবির করেন ওই শ্রমিক নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়। এমনকি প্রতিষেধক দেওয়ার নামে সোনারপুর থেকে শতাধিক মানুষকে কসবায় দেবাঞ্জনের শিবিরে নিয়েও গিয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল। এখন আদালতে নাম পরিবর্তন করে প্রশাসক পদে বসানো হচ্ছে তাঁকে। আলিপুর আদালতের আইনজীবীরাও ওই শ্রমিক নেতার গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন।” সরব বাম নেতারাও। পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তড়িৎ চক্রবর্তী বলেন, “স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রতিনিধিকে পুর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করলেই জটিলতার অবকাশ থাকে না।’’
তাপসবাবুর নিয়োগ নিয়ে পুর অন্দরেও একই গুঞ্জন। পুর প্রশাসকদের বক্তব্য, আইন অনুযায়ী, আদালতে নাম পরিবর্তন করার পরে তা সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হয়। তা ছাড়া সরকারি গেজ়েটে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। কিন্তু তেমন কোনও নথি পুরসভায় জমা দেননি তাপসবাবু। অথচ আচমকা ‘তাপস’ থেকে ‘অশোক’ হয়ে গিয়েছেন!
তবে শ্রমিক নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “আমার নাম অশোক। স্কুল-কলেজ, ভোটার কার্ড ও প্যান কার্ডে অশোক নাম আছে। ছোটবেলায় ঠাকুরমা তাপস নামে ডাকতেন। সেখান থেকে ওই নামেই পরিচিত।” যা শুনে বিজেপি ও বাম নেতাদের প্রশ্ন, এত দিন সর্বত্র তিনি তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেই পরিচয় দিয়েছেন। অশোক নাম সামনে আনেননি কেন? ভুয়ো প্রতিষেধক-কাণ্ডের পর ভোল বদল করে আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে অশোক নামে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তাঁদের দাবি।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার পুর প্রশাসক পল্লব দাস অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “প্রশাসনিক বিষয়ে কোনও কথা বলব না।” বিরোধীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভুয়ো প্রতিষেধক-কাণ্ডে জড়িত শ্রমিক নেতার পুর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে জেলা শ্রমিক নেতা শক্তি মণ্ডল ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীকে ফোন করা হলেও তাঁরা তা ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা থেকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ নিয়ে জটিলতার বিষয় ইমেল করে জানানো হয়েছে। এ বার তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।