ওয়ার্ড অফিসের বাইরেই বসে রয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে আবার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ প্রকাশ্যে এল। বিধায়ক বনাম কাউন্সিলর সংঘাতের জেরে ৬৮ নং ওয়ার্ড অফিসে ঢুকতেই পারলেন না কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষার পর তালাবন্ধ ওয়ার্ড অফিসের বাইরে থেকেই ফিরে গেলেন ‘ক্ষুব্ধ’ মহানাগরিক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওই কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বাবুল।
সোমবার উত্তর কলকাতার টালা পার্কে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ফিরহাদ এবং বাবুল। সেখান থেকে ফিরহাদকে সঙ্গে নিয়ে রাত ৮টা নাগাদ বালিগঞ্জ ফুটব্রিজের তলায় সেখানকার ওয়ার্ড অফিসে যান বাবুল। গিয়ে দেখেন, ওয়ার্ড অফিসে তালা লাগানো রয়েছে। এর পর অফিসে তালা খোলার উদ্যোগ শুরু হয়। তত ক্ষণে ওয়ার্ড অফিসের বাইরেই বসে পড়েন মেয়র এবং বিধায়ক। কিছু ক্ষণ অপেক্ষার পর তালা না খোলায় শেষে রাত ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ এলাকা ছাড়েন ফিরহাদ। এর কিছু সময় পরেই এলাকা ছেড়ে চলে যান বাবুলও।
তৃণমূলের একাংশের দাবি, ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিধায়ক বাবুলের সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। সোমবার ওয়ার্ড অফিসে তালা না খোলার নেপথ্যে সেই সংঘাতই কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা। বাবুল অনুগামীদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই অফিসে তালা লাগিয়েছেন কাউন্সিলরের অনুগামীরা। তাঁকে ফোন করা হলেও তাতে সাড়া দেননি। কাউন্সিলরের অনুগামীদের পাল্টা অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে ওই ওয়ার্ড অফিসটি দখল করতে চাইছেন স্থানীয় বিধায়কের অনুগামীরা। তাই তালা লাগানো হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, রবিবার বালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকার কাউন্সিলরদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ পাঠান বাবুল। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ওই ওয়ার্ড অফিসে সমস্ত কাউন্সিলরদের আসতে বলা হয়। সেই মতো সোমবার ৫ কাউন্সিলর যান ওই অফিসে। যদিও যাননি সুদর্শনা। পরে ৮টা নাগাদ সেখানে ফিরহাদকে নিয়ে যান বাবুল।
কাউন্সিলর অনুগামীদের সঙ্গে বিধায়ক অনুগামীদের বিবাদ অবশ্য এই প্রথম নয়। গত বছর গড়িয়াহাটের কাছে ফার্ন রোডে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানেও সংঘাতের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। সে বার বাবুলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগ ওঠে সুদর্শনা অনুগামীদের বিরুদ্ধে। বিধায়ককে ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর বিবাদের ছবি দেখা যায় জগদ্ধাত্রী পুজোয়। সংঘাতের কারণে গত বছর ওই এলাকায় বিধায়ক এবং কাউন্সিলরের অনুগামীরা আলাদা করে দু’টি জগদ্ধাত্রী পুজো করেন। তার পর সোমবার ওয়ার্ড অফিসে তালা খোলা নিয়ে আরও এক বার দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের ছবি প্রকাশ্যে এল। যদিও এটাকে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলে মানতে চাননি বাবুল। তবে এই ঘটনা সম্পর্কে বিশদে কিছু বলেননি। মুখ খোলেননি সুদর্শনাও।
সোমবার ভোটের আগে ত্রিপুরায় গিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা, অভিষেক কলকাতায় নেই। তার মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের অন্দরে এই দ্বন্দ্ব ঘিরে অস্বস্তিতে শাসকদল।