জলের জোগান কম। ভরসা গভীর নলকূপ। গরমে চাহিদা যেমন বাড়ে, তেমনই কমে জলস্তর। ফলে দেখা দেয় জলসঙ্কট। এ সমস্যা নতুন নয় বিধাননগরের দত্তাবাদে। কিন্তু এ বার সেই জলসঙ্কটকে কেন্দ্র করে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ওই এলাকা। বৃহস্পতিবার রাতের ওই সংঘর্ষে দু’পক্ষের কয়েক জন আহত হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়েরা। পুলিশে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
অথচ বাম আমলের বিধাননগর পুরসভা থেকে হাল আমলের পুর নিগমের শাসন ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ছিল একই। সল্টলেকে আর জলের সমস্যা থাকবে না। ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার বন্ধ করা হবে।
কিন্তু কথা আর কাজের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, তা বৃহস্পতিবার রাতে দত্তাবাদে জল নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাই স্পষ্ট করেছে। পুলিশ জানায়, রাত ন’টা নাগাদ জল তোলার লাইনে ভিড় জমে যায়। জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে মহিলাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। তার পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। শুরু হয় হাতাহাতি।
স্থানীয় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মল দত্ত বলেন, ‘‘জলের সমস্যা অনেকটাই মিটিয়েছি। কিছু অংশে সমস্যা আছে। তা নিয়ে চলছে গোলমাল। বিধায়ক তহবিলের টাকা দিয়ে গভীর নলকূপ বসানো হবে।’’
কাউন্সিলর জানান, ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। বাড়ি বাড়ি জলের সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে। তবে মূলত ৫-৬টি গভীর নলকূপই ভরসা। কিন্তু যে অঞ্চলে জলের অভাব, সেখানে গভীর নলকূপ নেই।
পুর-প্রশাসনের একাংশের মতে, ওয়ার্ডে জনঘনত্ব বেশি। পরিকাঠামো সংস্কার হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলরেরা চাইলে দ্রুত জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হয়।
সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘বিধাননগরের জন্য অতিরিক্ত জল সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে। দ্রুত তা কার্যকর করা হবে। তবে দত্তাবাদে গভীর নলকূপের মাধ্যমে আপাতত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’
মেয়র পারিষদ বীরেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘সমস্যার কথা শুনেছি। তা সমাধানে ইতিমধ্যে কিছু পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত কারণে তা কার্যকর করতে কিছুটা সময় লাগবে। আপৎকালীন কিছু পদক্ষেপ করা হবে।’’ তবে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, জলের সমস্যা দত্তাবাদে দীর্ঘ দিনের। কিন্তু এ ভাবে জলকে কেন্দ্র করে এমন গোলমাল আগে দেখা যায়নি।
তবে শাসক দল আপৎকালীন সমাধান হিসেবে যে গভীর নলকূপ বসানোর পরিকল্পনার কথা জানায়, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে প্রশাসন। তাদের একটি অংশের দাবি, বর্তমানে গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি মেলে না। ফলে বিকল্প পথ বার করতে হবে।
বিধাননগরের পুর-কমিশনার অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘জলের জোগান বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। দত্তাবাদ-সহ সংযুক্ত এলাকার জল সরবরাহের সমস্যা নিয়ে পরিকল্পনা করা হবে।’’ পুরসভা সূত্রে দাবি, ভোটারের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ বেশি জনসংখ্যা। তাঁরা পরিকাঠামো ব্যবহার করছেন।