নির্মীয়মাণ বহুতল চত্বরে থাকা যন্ত্রপাতিতে জমে রয়েছে জল। তাতে মশার ওষুধ স্প্রে করছেন পুরকর্মী। সোমবার, মহিষবাথানে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
ডেঙ্গি প্রতিরোধে সচেতনতার প্রচার পুরসভাকে করতে না দেওয়ায় কলকাতায় মশা দমনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের কিছু অফিসারের খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করছেন তিনি। গত এক মাসে ডেঙ্গিতে কলকাতায় চার জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে পুরসভার এই অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পুরসভার বক্তব্য, মৃত তিন জনের বাড়ির কাছাকাছি রয়েছে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানে বিনা পয়সায় রক্তপরীক্ষার করার ব্যবস্থা থাকলেও বিষয়টি না জানার কারণে সেখানে যাননি কেউ। বেসরকারি নার্সিংহোমে দেরিতে যাওয়ায় সংক্রমণ জটিল হয় আক্রান্তদের।
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তৃণমূল বোর্ড ক্ষমতায় আসার পর থেকে শহরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে রেডিয়ো, টিভি, সংবাদপত্রে লাগাতার প্রচার চালিয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু বছর খানেক আগে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দেয়, ডেঙ্গি সচেতনতায় প্রচার করবে শুধু স্বাস্থ্য দফতর। কোনও পুরসভার তা করার দরকার নেই। সেই মতো এখন স্বাস্থ্য দফতরের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, জ্বর হলেই সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। এখানেই আপত্তি অতীনবাবুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কলকাতা শহরে পুরসভার ১৪৪টি ক্লিনিক রয়েছে। ১৬টি ডেঙ্গি নির্ণয় কেন্দ্র রয়েছে। সরকারি বিজ্ঞাপনে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে না।’’ এ বিষয়ে দিন কয়েক আগে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘‘সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানেই তো সব। পুরসভা তার বাইরে নয়।’’ সোমবার অতীনবাবু বলেন, ‘‘আসলে স্বাস্থ্য দফতরের অতিপণ্ডিত কিছু অফিসার পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে এক করে ফেলতে চাইছেন। সরকারি বলতে বেশির ভাগ লোকে হাসপাতালকেই মনে করে। সেখানে সব ধরনের রোগের চিকিৎসা হয়। আর কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনস্বাস্থ্যের কাজটা গুরুত্ব সহকারে করা হয়। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মত রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতার কাজ পুরসভা করছে। সেটা ওঁদের মাথায় রাখা দরকার।’’
পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক অফিসার জানান, জনস্বাস্থ্যের প্রচারে বরাবরই কলকাতা পুরসভা নিজেরাই রেডিয়ো, টিভি, সংবাদপত্র, ব্যানার-ফেস্টুনে প্রচার করেছে। এফএম-এ প্রচার করে ডেঙ্গি প্রতিরোধে সাফল্য মিলেছে বলেই বর্তমানে বছরে হাজারের নিচে নেমে এসেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। ২০১২ সালে এই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ৭-৮ হাজার। পুরসভার প্রচারের খরচ পুর প্রশাসনই বহন করে। তা হলে পুরসভাকে প্রচার করতে দিতে আপত্তি কেন স্বাস্থ্য দফতরের, প্রশ্ন তুলছেন পুর আধিকারিকেরা।
অতীনবাবু এ দিন বলেন, ‘‘পুজো ক’দিনেও পুরসভার প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা ছিল। উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার চারটি ডেঙ্গি নির্ণয় কেন্দ্র রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত খোলা ছিল। কিন্তু প্রচার করতে না পারায় বিষয়টি শহরবাসীকে জানানো যায়নি।’’
ডেপুটি মেয়রের ওই অভিযোগ সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক অফিসার কিছু বলবেন না বলে জানান। জানা যায়, রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেশের বাইরে। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হলেও রাত পর্যন্ত কোনও জবাব আসেনি।