queer

KMC election 2021: ইস্তাহারের নীচের দিকেই থেকে যায় ‘তাহাদের কথা’

অতিমারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে চলা লকডাউনে বৃহন্নলারাও চাল-ডাল, আলু নিয়ে রোজগারহীন মানুষের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৬
Share:

কথা: দক্ষিণ কলকাতার একটি বাড়িতে আলোচনায় বৃহন্নলারা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

ভোটার কার্ডের ছবি প্রমাণ দেয় যে, তাঁরা এই শহর তথা এই দেশের নাগরিক। কিন্তু তাঁদের সহনাগরিকের সম্মান দিতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের চলাফেরা বা কথাবার্তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপের অভ্যাসটা এখনও পুরো পাল্টাতে পারেননি কল্লোলিনী তিলোত্তমার মানুষজন। অভিযোগ, পেশার তাগিদে গৃহস্থের বাড়িতে গিয়ে কুকুরের তাড়াও খেতে হয়। তাই পুরভোটের মরসুমে আক্ষরিক অর্থেই শহরবাসীর সহনাগরিক হয়ে ওঠার দাবিকে অগ্রাধিকার দিতে চান কলকাতার বৃহন্নলাদের অনেকে।

Advertisement

‘ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড’ তৈরি করে বৃহন্নলাদের সেটির অধীনে আনতে চেয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু এ নিয়ে প্রচার তেমন ভাবে না থাকায় বিষয়টি জানেন না কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো বৃহন্নলাদের অনেকেই।

সম্প্রতি ই এম বাইপাসের কাছে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভিআইপি নগর এলাকার একটি বাড়িতে রুমি, সম্রাজ্ঞী দত্ত, ডলি রায়-সহ বৃহন্নলা পেশার কয়েক জনের দেখা মিলল। পুরভোটের প্রাক্কালে তাঁরাও চান শহরে পানীয় জলের সরবরাহ বাড়ুক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে আরও জোর দিক ছোট লালবাড়ির পরবর্তী শাসক গোষ্ঠী।

Advertisement

বৃহন্নলা ডলির কথায়, ‘‘আমার পাড়ায় জল সরবরাহ হয়। কিন্তু পার্শ্ববর্তী পঞ্চান্নগ্রামে এখনও পুরসভার জল আসেনি। সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমার এটাই চাহিদা।’’

কিন্তু এ সবের পাশাপাশি বৃহন্নলাদের অনেকেই মনে করেন, তাঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও স্বাভাবিক নয়। সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সচেতনতার প্রচার শুরু হোক ওয়ার্ড স্তর থেকেই। নিউ আলিপুরের ভোটার সম্রাজ্ঞী বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ওয়ার্ড কমিটিতে বৃহন্নলাদের প্রতিনিধিত্ব রাখা হোক। আমরা আর পাঁচ জনের মতোই ভোট দিই। এই শহরেই ঘোরাফেরা করি। আমাদের কথা তো আমরাই মানুষকে বোঝাতে পারব। রাজনৈতিক দলগুলির ইস্তাহারের একটু উপরের দিকে জায়গা পাক আমাদের প্রসঙ্গ।’’

অতিমারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে চলা লকডাউনে বৃহন্নলারাও চাল-ডাল, আলু নিয়ে রোজগারহীন মানুষের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তবু তাঁদের প্রয়াস অনেকটাই যেন ফিকে হয়ে যায়, যখন দেখা যায়, কলকাতা শহরেই রাস্তায় দাঁড়ানো বৃহন্নলাদের একটি অংশ টাকা চাইছেন গাড়ির যাত্রীদের থেকে। না দিলে গালিগালাজ করছেন। এমন অভিযোগ করছেন বৃহন্নলাদেরই অন্য একটি অংশ।

যদিও শহরের বৃহন্নলাদের একটি গোষ্ঠীর ‘গুরু মা’ রুমির দাবি, প্রকৃত বৃহন্নলারা রাস্তায় ওই ধরনের আচরণ করেন না। রাস্তায় ওই ধরনের ঘটনার অভিযোগ তাঁদের কানেও এসেছে। রুমির কথায়, ‘‘পরম্পরা মেনে আমরা শুধু বিয়ের সময়ে এবং বাচ্চা জন্মালেই কারও বাড়িতে যাই। লকডাউনে আমরাও এই শহরের রাস্তায় ত্রাণ নিয়ে ঘুরেছি। পুরভোট প্রসঙ্গে কথা বলতে বসে এ সব নিয়ে কিছু বলব না। শহরটা সুন্দর হোক, তা হলে আমরাও ভাল থাকব।’’

তা হলে এর প্রতিকার কী?

লাইসেন্স কিংবা প্রকৃত বৃহন্নলার পরিচয়পত্র কি পুরসভা দিতে পারে? এই বিষয়টা স্পষ্ট নয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছেও। তবে তাঁর উত্তর, ‘‘ওঁরা অনেক ক্ষেত্রেই ভাবেন, বোধহয় ওঁদের কথা গুরুত্ব পাচ্ছে না। আমরা পুলিশের সঙ্গে ওঁদের একটা বৈঠক করানোর কথা ভেবেছি। ওয়ার্ড কমিটিতে ওঁদের জায়গা হতে পারে না, এমনটা নয়। ইস্তাহারে ওঁদের সমস্যার সমাধানের প্রসঙ্গও রাখা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement