KMC Polls 2021

KMC election 2021: রাস্তা সরু, পানীয় জলের অভাবে ‘থমকে’ উন্নয়ন

আইনি জটিলতার কারণে এলাকায় জলের পাইপলাইনের সংযোগও নেই অধিকাংশ বাড়িতে। কারণ পুর আইন অনুযায়ী, ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই।

Advertisement

  শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

n ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রামাণিকপাড়ার সরু রাস্তার পাশে এ ভাবেই জমেছে জল, পড়ে রয়েছে আবর্জনাও। নিজস্ব চিত্র।

ওয়ার্ডের পাশেই ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। তবু ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাড়িতে নেই জলের পাইপলাইনের সংযোগ। পাড়ার রাস্তা এতটাই সরু যে, বাড়ি অবধি পৌঁছতেই পারে না অ্যাম্বুল্যান্স। তাই আজও এখানে ‘থমকে’ উন্নয়ন। এমনটাই অভিযোগ কলকাতা পুরসভার সংযোজিত ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের।

Advertisement

ঠাকুরপুকুর এলাকার ওই ওয়ার্ডে আজও পানীয় জল কিনে খেতে হয় স্থানীয়দের। অধিকাংশ এলাকায় রাস্তা মাত্র ৫-৬ ফুট চওড়া। পাশের ঝোপজঙ্গল থেকে মাঝেমধ্যেই বেরোয় বিষধর সাপ। ওয়ার্ডে জলের পাইপলাইনের ব্যবস্থা থাকলেও অভিযোগ, অধিকাংশ সময়েই তাতে নোনতা জল আসে। তাই পানীয় জলের জন্য এক একটি নলকূপের উপরে ভরসা করে প্রায় শ’দুয়েক পরিবার। আর যাঁদের বাড়ির কাছাকাছি নলকূপ নেই, তাঁদের জল কিনতে খরচ প্রতিদিন ৪০ টাকা।

আইনি জটিলতার কারণে এলাকায় জলের পাইপলাইনের সংযোগও নেই অধিকাংশ বাড়িতে। কারণ পুর আইন অনুযায়ী, ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই। তাই জলের সংযোগ মেলেনি বলে অভিযোগ। হাঁসপুকুরের কয়ালপাড়ার অনু মণ্ডলের কথায়, ‘‘কয়েক পুরুষ ধরে এখানে বাস করছি। এখন নতুন করে দলিল ও নথি বানানো তো সম্ভব নয়। তা ছাড়া রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত এক ফুট পাইপলাইন বসাতে হাজার পাঁচেক টাকা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে পাইপলাইন টেনে আনতে খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতি পাড়ায় একটি করে নলকূপের ব্যবস্থা করা হলেও তাতে চাহিদা মিটছে না।’’

Advertisement

ওই এলাকার আর এক বাসিন্দা তনুশ্রী বাগ বললেন, ‘‘কয়েক মাস ধরে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাচ্ছি। তাতে দিনপ্রতি সাড়ে ১৭ টাকা করে হয়। জল কেনার কিছুটা খরচ ওখান থেকে মেটাচ্ছি।’’

পানীয় জল ও নিকাশির চেয়েও এলাকার বড় সমস্যা সঙ্কীর্ণ রাস্তা। জায়গীরঘাট, মণ্ডলপাড়া, বাবুর বাগান, নস্করপাড়া, বারুইপাড়া, প্রামাণিকপাড়া , পাত্রপাড়া, হাঁসপুকুর, হংসরাজ পল্লি, বিজয়ভূমির অধিকাংশ জায়গাতেই পথ এতটাই সরু যে, বাড়ি পর্যন্ত দমকল পৌঁছনোরও সুযোগ নেই। ঢিল ছোড়া দূরত্বে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতাল হলেও কোনও রোগীকে সরু রাস্তা দিয়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। পাত্রপাড়ার বাসিন্দা সাধন মাইতির কথায়, ‘‘পাইপলাইনে জল থাকলেও তা খাওয়া যায় না। রাস্তা আছে, কিন্তু সেখান দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স-দমকল ঢুকতে পারে না। সঙ্কটজনক রোগীকে অটোয় করে হাসপাতালে িনয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা গিয়েছেন, এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে।’’

ওয়ার্ডের যে নিকাশি নালাগুলি চড়িয়াল খালের সঙ্গে যুক্ত, সেগুলি প্রায় সবই বুজে গিয়েছে। রাস্তায় এক সময়ে পিচের প্রলেপ পড়লেও এখন তা আর নেই। ফলে বৃষ্টি হলে কর্দমাক্ত পথে হাঁটাচলা করাই দায়। তবে সন্ধ্যা হলেই এলাকায় জ্বলে ওঠে ভেপার লাইট।

পুর নথি অনুযায়ী, ২০১২ সালে জোকা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা গ্রহণ করে কলকাতা পুরসভা ১৪২, ১৪৩ ও ১৪৪ ওয়ার্ড গঠন করে তা সংযোজিত এলাকা ঘোষণা করে। কিন্তু তার ১০ বছর পরেও এলাকার উন্নয়ন পঞ্চায়েত এলাকার থেকেও খারাপ বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কোঅর্ডিনেটর তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী শেফালি প্রামাণিক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের সময়ে ওই এলাকায় বড় বড় বাড়ি তৈরি হয়েছে। সেই সব বাড়ি ভেঙে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাস্তা সংস্কার করা যায়নি। তবে যেখানে সম্ভব সেখানেই রাস্তা আরও চওড়া করা হয়েছে।’’

আর পানীয় জলের জোগানের বিষয়ে তাঁর আশ্বাস, ‘‘জোকায় বিশালাকার ওভারহেড ট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হবে।’’

বিরোধী সিপিএম প্রার্থী, পেশায় গৃহশিক্ষক বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। প্রত্যেকেরই সরকারি পরিকাঠামোর মাধ্যমে পানীয় জল পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কলকাতা পুরসভা একটি আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে এলাকাবাসীকে পানীয় জল সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। ভোটে জিতলে প্রতিটি বাড়িতে পরিস্রুত জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’’

আর বিজেপি প্রার্থী অনিন্দিতা ঘোষ বলেন, ‘বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত রকম পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে আমরাই পারি। কিন্তু শাসকদল এলাকায় সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছে। মানুষ মুখ বুজে কষ্ট সহ্য করছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement