থমকে: নিউ মার্কেটে পুজোর কেনাকাটার ভিড়ের জেরে তীব্র যানজট। সোমবার, পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
লক্ষ্মীপুজো মিটলেই মেরামতির কাজের জন্য বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, পয়লা নভেম্বর থেকে ওই সেতুর দু’দিকের পাইলনের সঙ্গে যুক্ত কেব্লের মেরামতি এবং তা পাল্টানোর কাজ শুরু হবে। এর জন্য দু’দফায় প্রায় আট মাস সেখানে যান নিয়ন্ত্রণ করার কথা। ৮২৩ মিটার দীর্ঘ বিদ্যাসাগর সেতুর ছ’টি লেনের মধ্যে দু’পাশের দু’টি লেন আটকে এই কাজ হবে। তখন সেতুতে ছোট গাড়ি এবং বাস চললেও পণ্যবাহী লরি চলাচল করবে না। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা মনে করছেন, আট মাস ধরে সেতু মেরামতির কাজ চললে ওই সেতু-সহ শহরের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। উল্লেখ্য, গত বছর সাঁতরাগাছি সেতু মেরামতির সময়ে বিদ্যাসাগর সেতুর দু’দিকে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। তার জেরে গঙ্গাতীরের দু’দিকে যানজটে নাকাল হয়েছিলেন যাত্রীরা।
সেতুতে কাজ চলার সময়ে ট্র্যাফিক নিয়ে পুলিশ একাধিক পরিকল্পনা করলেও তাদের আশঙ্কা, কালীপুজো, ছটপুজো এবং ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপের বিভিন্ন খেলার দিনে সমস্যা হতে পারে। কারণ, নভেম্বরের মাঝামাঝি কালীপুজো ও ছটপুজো। কালীপুজোর নিরঞ্জন এবং ছটের জন্য স্ট্র্যান্ড রোড, কিংস ওয়েই শুধু নয়, শহরের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ রাখা হয়। ফলে ওই ক’দিন লরি বা পণ্যবাহী যে কোনও গাড়ি শহরে ঢুকতে বা বেরোতে পারবে না। একই সঙ্গে, ভিআইপি রোড এবং বি টি রোডে কাজের জন্য নভেম্বরের ওই সময়ে যান নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে নিবেদিতা সেতুতে যাওয়ার দু’টি রাস্তাতেও। ফলে ওই সব রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ছোট গাড়িকে যানজটের কবলে পড়তে হতে পারে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি যাওয়ার কারণে।
বিদ্যাসাগর সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি)। তাদের পর্যবেক্ষণে ফ্রান্সের একটি সংস্থা ওই কাজ করবে বলে ঠিক হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই সেতুর যান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারের শীর্ষ স্তরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, গোটা বিষয়টি নিয়ে হাওড়া, বিধাননগর এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সঙ্গেও সমন্বয় বৈঠক করা হবে।
লালবাজার জানিয়েছে, ওই সেতু দিয়ে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৭০ হাজার গাড়ি এবং প্রায় ১৫ হাজার লরি বা পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। ছ’লেনের ওই সেতুর তিনটি লেন দিয়ে কলকাতামুখী এবং বাকি তিনটি লেন দিয়ে হাওড়ামুখী গাড়ি যাতায়াত করে। সেতুর কেব্ল বদলের জন্য প্রথমে হাওড়ামুখী রাস্তার দু’টি লেন আটকানো হবে। তখন বাকি চারটি লেনকে দু’ভাগে ভাগ করে সেখানে অস্থায়ী পথ-বিভাজিকা তৈরি করা হবে। যাতে দু’দিকের দুই লেন দিয়ে গাড়ি যেতে পারে। পুলিশের অনুমান, এ ভাবে গাড়ি চালানো হলে ছোট গাড়ি এবং বাস চলাচল করতে পারবে।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, যে সব পণ্যবাহী লরি এখন বেহালা-আলিপুরের দিক থেকে এসে বিদ্যাসাগর সেতু ধরে, সেগুলিকে তখন হসপিটাল রোড, ধর্মতলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, টালা সেতু, বি টি রোড হয়ে নিবেদিতা সেতু দিয়ে পাঠানো হবে। আবার টালিগঞ্জ-ভবানীপুরের দিক থেকে আসা লরি বা ট্রাককে এক্সাইড মোড়, ধর্মতলা হয়ে ওই একই রুটে নিবেদিতা সেতুতে পাঠানো হবে। সব চেয়ে বেশি পণ্যবাহী লরি
চলাচল করে বিদ্যাসাগর সেতু এবং বন্দর এলাকার মধ্যে। ওই এলাকা থেকে যে সব লরি ও ট্রাক শহরের বাইরে যায়, তাদের হেস্টিংস মোড় থেকে ঘুরিয়ে স্ট্র্যান্ড রোড, কিংস ওয়ে, ধর্মতলা হয়ে পাঠানো হবে নিবেদিতা সেতুতে।