Road accidents

‘পুজোর জয় রাইড যেন ভয়ের রাইড না হয়’

পুজোর শহরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বহু বার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উৎসব-যাপনের নামে ‘জয় রাইড’-এ বেরোনো গাড়ি বা মোটরবাইকের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৪৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কোথাও মধ্য রাতে গাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে বেরোনো বেপরোয়া হাত পিষে মেরেছে দু’জনকে। কোথাও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর বিভাজিকায় ধাক্কা মেরে উল্টেছে গাড়ি। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সেই গাড়ি থেকে চালক ও সহযাত্রী, বেঁচে ফেরেননি কেউই। কোথাও আবার মোটরবাইক সেতুর রেলিংয়ে ধাক্কা মারার অভিঘাতে চালকের শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়ে গিয়েছে!

Advertisement

পুজোর শহরে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বহু বার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উৎসব-যাপনের নামে ‘জয় রাইড’-এ বেরোনো গাড়ি বা মোটরবাইকের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের দাবি। তবু পুজোর রাতে আনন্দের নামে বেপরোয়া গাড়ি বা বাইকের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি। এ বারও তাই পুজোয় মধ্য রাতের ‘জয় রাইড’ই চিন্তা বাড়াচ্ছে পুলিশের। নিচুতলার পুলিশকর্মীদের দাবি, উৎসবে ছাড়ের নামে যেখানে হেলমেটহীন বা এক মোটরবাইকে একাধিক আরোহীকে দেখলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, সেখানে ‘জয় রাইড’ বন্ধে কড়াকড়ি হবে কী করে? অনেকের দাবি, নাকা-তল্লাশি বা মত্ত চালকদের ধরতে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারের মাধ্যমে পরীক্ষাও সে ভাবে হচ্ছে না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি পুজোয় শুধু দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান দিয়েই কাজ সেরে ফেলবে পুলিশ?

গত বছরই যেমন পঞ্চমী থেকে দশমীর রাত পর্যন্ত শহরে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ জনের। আহত ১৫ জনেরও বেশি। সব চেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে দশমীর রাতে। শিয়ালদহের কাছে বিদ্যাপতি সেতুর উপরে একটি বেপরোয়া বাস একাধিক পথচারীকে পিষে দিলে তিন জনের মৃত্যু হয়। দু’টি বাসের রেষারেষির জেরেই ঘটে ওই দুর্ঘটনা। আরও জানা যায়, সেতুতে হাঁটা নিষিদ্ধ হলেও পুলিশের নজর ছিল না। পুজো শেষে পুলিশ শুধু জানায়, শহরে বিধিভঙ্গের জন্য মোট ৩৪,৬৮৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে হেলমেট না থাকার অভিযোগে হয়েছে ৭৩০২টি মামলা। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ৫৭৭৫টি এবং নো-পার্কিং জ়োনে গাড়ি রাখার অভিযোগে ১১,৪৯৪টি মামলা করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই হয়েছে মধ্য রাত থেকে ভোরের মধ্যে।

Advertisement

চলতি মাসের শুরুতেও ‘জয় রাইড’-এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মা উড়ালপুলে। টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড থেকে বেরিয়ে একটি গাড়ি দ্রুত গতিতে মা উড়ালপুল ধরে চিংড়িঘাটার দিকে যাওয়ার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। মৃত্যু হয় গাড়িটির চালক, পার্ক স্ট্রিটের একটি কলেজের ছাত্র নীহার আগারওয়ালের (১৯)। গাড়িতে ছিলেন আরও চার আরোহী। নীহারের বাবা রজনীশ আগারওয়াল বললেন, ‘‘প্রায়ই রাতে গাড়ি নিয়ে ওরা বেরোত। খেয়েদেয়ে আনন্দ করে ফিরত। এ রকম হবে ভাবিনি। সংসারটাই শেষ হয়ে গিয়েছে আমাদের।’’ সন্তান হারানো বাবার পরামর্শ, ‘‘ওই জয় রাইড আমাদের কাছে ভয়ের রাইড হয়ে গিয়েছে। পুজোর রাতে এমন যেন আর কারও না হয়।’’

এমনই এক পুজোর রাতে বাইকে সওয়ার ছেলের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে বলতে গিয়ে মধ্যবয়সি সুমিত্রা জানা বললেন, ‘‘পুজোর আলো যেন আমাদের জীবনে আরও অন্ধকার নিয়ে আসে। এই দিনগুলোয় টিকতে পারি না। বাবা-মায়েদের শুধু বলতে চাই, ছেলেমেয়েরা না বুঝলেও আপনারা ছাড়বেন না। একটু খোঁজ নেবেন, পুজো হলেও রাত হচ্ছে কেন। বার বার ওদের মনে করাবেন, জীবনটা অনেক আগে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement