উদ্বেগ: শিয়ালদহ স্টেশনে রেলের সহায়তা কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পরে আসতে থাকে একের পর এক ফোন। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
মুহুর্মুহু বাজছে ফোন। ফোনের ও প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে একে একে উৎকণ্ঠার স্বর। কেমন আছেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীরা? রেলের আধিকারিকেরা কামরা, আসন এবং পিএনআর নম্বর লিপিবদ্ধ করছেন। তার পরে জানিয়ে দিচ্ছেন, রেল দুর্ঘটনার পরে কী অবস্থা যাত্রীদের।
উত্তরবঙ্গের রাঙাপানিতে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে খোলা হয় যাত্রী সহায়তা কেন্দ্র। হাওড়া স্টেশনে জিআরপির তরফ থেকেও অনুসন্ধান অফিসের সামনে সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়। তবে দিনভর সেখানে যাত্রীদের আত্মীয়দের তেমন ভিড় ছিল না। সিংহভাগ মানুষই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে খবর নিচ্ছিলেন।
পূর্ব রেল জানাচ্ছে, সোমবার সকাল থেকেই ওই সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়। কর্মীদের একাংশকে দিনভর ওই কেন্দ্রে মোতায়েন রাখা হয়। তবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের আত্মীয়েরা খোঁজ নিতে না এলেও সেখানে ভিড় জমান সেই যাত্রারী, যাঁদের অন্যান্য ট্রেনে সফর করার কথা আছে। তাঁদের ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছাড়বে কি না, মূলত সে খবরই জানতে চাইছিলেন। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিজে শিয়ালদহে উপস্থিত থেকে জানান, উত্তরবঙ্গমুখী কোনও ট্রেনের সময় পরিবর্তন হয়নি। তবে কলকাতামুখী বেশ কিছু ট্রেনের পথ বদল করা হয়েছে।
এ দিনের দুর্ঘটনার পরে সকালেই শিয়ালদহে উপস্থিত হয়ে রেলওয়ে মেল সার্ভিসের কর্মী শঙ্করমোহন দাসের খোঁজ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁর পরিজনদের। তাঁরা জানিয়েছিলেন, শঙ্করের খোঁজ মিলছে না। সহায়তা কেন্দ্রও তাঁদের সেই সময়ে সাহায্য করতে পারেনি। বেলা গড়াতে শঙ্করের মৃত্যুর খবর আসে।
দুর্ঘটনার খবর চাউর হতেই অনেক যাত্রীকে ট্রেনের নির্ধারিত সময়ের বহু আগে কলকাতার দুই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে পৌঁছে যেতে দেখা যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কামরূপ এক্সপ্রেস ধরার জন্য সপরিবার দুপুর তিনটেয় পৌঁছে যান সম্রাট চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে ট্রেন দুর্ঘটনা শোনার পরেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। তাই কামরূপ এক্সপ্রেস সময়ে ছাড়বে কি না জানতে আগেভাগে চলে এসেছি।’’ একই অবস্থা সরাইঘাট এক্সপ্রেসের যাত্রী তথাগত মিত্রেরও। ট্রেন সময়ে ছাড়বে কি না, তা জানতে তিনিও আগে পৌঁছে যান। শিয়ালদহে অনুসন্ধান অফিসের সামনে এসে তিস্তা-তোর্সা, কাঞ্চনকন্যা, দার্জিলিং মেলের নির্ধারিত সময় নিয়ে খোঁজ করতে দেখা যায় যাত্রীদের।
হাওড়া স্টেশনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত যাত্রীদের তথ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে দেখা যায় রেল পুলিশকে। হাওড়া ডিভিশনের রেল পুলিশ সুপার পঙ্কজকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘আহত বা মৃত যাত্রীদের খোঁজ দেওয়া ছাড়াও তাঁদের আত্মীয়দের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’ উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য এ দিন বিকেলে একটি বিশেষ ট্রেনে হাওড়া থেকে ৫০ জনের রেল রক্ষী বাহিনীর দল দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেয়।