রাস্তার পাশে হকাররা। — ফাইল চিত্র।
কথা ছিল, গত বছরের ২১ নভেম্বরের মধ্যে শহরের হকার সমীক্ষা শেষ করা হবে। কিন্তু তা শেষ করতে পেরিয়ে যায় ডিসেম্বর। তার পরে নানা জটিলতা পেরিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জনের নাম চূড়ান্ত হয়, যাঁরা হকারির শংসাপত্র (ভেন্ডিং সার্টিফিকেট) পাবেন। ঠিক হয়, ওই ১৯ জনের পরে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তাঁদের, যাঁরা ২০১৫ সালে সরকারি নির্দেশ মেনে শংসাপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জুন মাসের ১১ তারিখ পেরিয়ে গেলেও কাউকেই এখনও হকারির শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। যা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বার বার নির্দেশ দেওয়ার পরেও কী কারণে আটকে যাচ্ছে শংসাপত্র দেওয়ার কাজ?
কলকাতা পুরসভার কর্তা এবং হকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, এই বিষয়ে বুঝে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই সময় লাগছে। এই ‘বুঝে পদক্ষেপের’ উদাহরণ হিসেবে তাঁরা জানাচ্ছেন, জটিলতা তৈরি হয়েছে হকারির শংসাপত্রের ফি নিয়ে। এই ধরনের ফি আদৌ নেওয়া উচিত কি না, সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে পুরসভা থেকে বিষয়টি পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে। তিনি সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই ফি নিয়ে শংসাপত্র দেওয়ার পথে হাঁটা হবে বলে খবর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি পাঠানোর পরে দু'মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও উত্তর আসেনি। তবে এত কিছু ছাপিয়েও যে প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠছে তা হল, হঠাৎ এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতির প্রয়োজন হচ্ছে কেন?
অনেকেই এর পিছনে পার্কিং ফি বৃদ্ধির পরের ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ উত্থাপন করছেন। শহরে পার্কিং ফি এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছিল। রাতারাতি সেই বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে ওই বর্ধিত পার্কিং ফি ‘চাপানো’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন শাসকদলের এক নেতা। এতে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। সেই সময়েই প্রশ্ন ওঠে, পুরসভা কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে তার আগে কি আদৌ মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন? শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুরসভা বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহার করে নেয়।
ওই ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতেই পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন) দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘হকার শংসাপত্রের ফি নিয়ে একটা জটিলতা চলছে। আসলে এমন জিনিস তো আগে কখনও এখানে হয়নি। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি প্রয়োজন।’’ হকার সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস দাসের কথায়, ‘‘সবটা হয়েই গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত এসে গেলেই বাকি কাজ হয়ে যাবে। গত সপ্তাহেই টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি।’’
সূত্রের খবর, সমীক্ষায় শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার এলাকার মধ্যে গড়িয়াহাট থেকে প্রায় ২৪০০ হকারের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। হাতিবাগান এবং নিউ মার্কেট থেকে নথিভুক্ত হয়েছে যথাক্রমে ১৪০০ ও ২০০০ হকারের নাম। সমীক্ষা শেষে টাউন ভেন্ডিং কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শংসাপত্রের জন্য এক জন হকারকে দিতে হবে ৫০০ টাকা। প্রতি বছর শংসাপত্র নবীকরণ করার জন্য নেওয়া হবে ৫০০ টাকা করে। এ ছাড়া, ব্যবসার জন্য প্রতি বছর প্রত্যেক হকার পুরসভাকে দেবেন ২০০০ টাকা। অর্থাৎ, বছরে শহরে হকারির খরচ পড়বে ২৫০০ টাকা। কিন্তু এই টাকা কি আদৌ নেওয়া হবে? সবটাই মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।