সরকারি বাস। —ফাইল চিত্র।
কলকাতার রাস্তায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেড়শো বছর আগে ট্রাম পরিষেবা শুরু হলেও সরকারি বাস এসেছে স্বাধীনতার পরে। ১৯২২ সালে শহরে প্রথম বাস চলাচল শুরু হলেও সরকারি বাস আত্মপ্রকাশ করে ১৯৪৮ সালের ৩১ জুলাই। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের হাত ধরে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য চালু হওয়া সেই পরিষেবা পা দিল ৭৫ বছরে। সোমবার সরকারি বাস পরিষেবা শুরুর সেই মুহূর্তই উদ্যাপন করলেন কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কর্মীরা। বেলঘরিয়ায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যাপিত হল দিনটি।
‘স্টেট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস’ হিসেবে পরিষেবা শুরু হলেও ১৯৬০ সালে বিধানসভায় আইন পাস করে ওই সংস্থাকে রূপান্তরিত করা হয় ‘ক্যালকাটা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন’ (সিএসটিসি) বা কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ৯০ শতাংশ রুট নতুন সরকারি সংস্থার অধীনে ছিল। তবে টাকার অভাবে নতুন রুট চালু করা যাচ্ছিল না। তখন শুরু হয় বেসরকারি বাসকে পারমিট দেওয়া।
১৯৬৬ সালে কলকাতা-দিঘা পরিষেবা শুরু করে নিগম। পরে শিলিগুড়ি এবং রাজ্যের অন্য একাধিক জেলা শহরকে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত করে নিগমের বাস। ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার সিএসটিসি-কে কলকাতার প্রধান বাস পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে ঘোষণা করে। পরে দূরপাল্লার পরিষেবা বন্ধ করে শুধু কলকাতা-কেন্দ্রিক পরিষেবায় মন দেয় সংস্থা। ওই বছরই নিগম প্রথম বাতানুকূল বাস এবং ভলভো বাসের পরিষেবা শুরু করে। আয়ের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয় এই পরিষেবা।
সামনে ইঞ্জিন দেওয়া বাস থেকে দোতলা বাস, আরও পরে সিএনজি-চালিত বাস, বাতানুকূল ভলভো বাস এবং এখন ব্যাটারিচালিত বাস— নিগমের পরিষেবার এই সব পরিবর্তন এ দিন তুলে ধরেন পরিবহণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল ও রাজ্য পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজনবীর সিংহ কপূর-সহ একাধিক কর্তা। বিধানসভার ব্যস্ততায় উপস্থিত না থাকলেও শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় নিগমের চেয়ারম্যান মদন মিত্র বিশেষ ভাবে সাজানো ১১টি ডিপোর ১১টি বাসের সূচনা করেন।
এ দিন বিশেষ অবদানের জন্য ৩৫ জন কর্মীকে সম্মানিত করা হয়। বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয় সদ্য অবসর নেওয়া ৩১ জনকে। অনুষ্ঠিত হয় রক্তদান শিবিরও। নিগমের পক্ষ থেকে এ দিন বিভিন্ন ডিপোয় পাঠাগার তৈরির উদ্যোগের কথা জানানো হয়েছে, যা কর্মী এবং আধিকারিকদের সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।