Illegal Construction

পুরসভায় পাহাড় জমছে নালিশের, অবৈধ নির্মাণ ভাঙবে কে?

পুজোর দশ দিনের ছুটি শেষ হতেই পুরসভার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফোন করে অভিযোগ জানানো শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে একাধিক নাগরিকের অভিযোগ, পুরসভা নোটিস পাঠালেও বেআইনি নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৩৩
Share:

কলকাতা পুরসভা। ফাইল চিত্র।

বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ আগেও উঠেছে। এখনও উঠছে। ‘টক টু মেয়র’-এর মতো সরাসরি সম্প্রচার হয়, এমন অনুষ্ঠানে সকলের সামনেই কলকাতার মেয়র একাধিক বার ভর্ৎসনা করেছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের। তাতেও অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুরসভা কড়া পদক্ষেপ করেনি বলেই দাবি নাগরিকদের একাংশের।

Advertisement

অথচ, তিনি পুরসভার প্রধান, বিল্ডিং দফতরেরও দায়িত্বে। তবু কেন বার বার অভিযোগ ওঠে? বিরক্ত অভিযোগকারীদের প্রশ্ন, তা হলে কি ধরে নিতে হবে দুর্নীতি উচ্চ স্তরেও ছড়িয়েছে? পুরসভার মাথা হয়ে মেয়র কী ভাবে সেই দুর্নীতির দায় ঝাড়তে পারেন? যদি এমনই হয় যে, তাঁর কথার গুরুত্ব দিচ্ছেন না আধিকারিকেরা, তা হলে তা মেয়রের মস্ত বড় ব্যর্থতা!

পুজোর দশ দিনের ছুটি শেষ হতেই পুরসভার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফোন করে অভিযোগ জানানো শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে একাধিক নাগরিকের অভিযোগ, পুরসভা নোটিস পাঠালেও বেআইনি নির্মাণ বন্ধ হচ্ছে না। নোটিস পাঠানোর পরে নির্মাণ বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। কলকাতা পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক আবার দাবি করছেন, ‘‘পুরসভার নোটিস তো ‘আইওয়াশ’ মাত্র। বিল্ডিং বিভাগের কর্মীদের মদতেই বেআইনি নির্মাণ হয়ে চলেছে।’’

Advertisement

বিরোধী দলের কাউন্সিলরই শুধু নন, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন স্বয়ং মেয়রও, যিনি ওই বিভাগের দায়িত্বে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে আসা একটি ফোনের প্রেক্ষিতে তাঁর অভিযোগের তির সে দিকেই ছিল। সেই ফোনে কড়েয়া থানা এলাকার বাসিন্দা এক নাগরিক অভিযোগ করেন, বেআইনি নির্মাণ নিয়ে মাস ছয়েক আগে পুরসভায় অভিযোগ জানিয়েও কাজ হয়নি। যা শুনে সর্বসমক্ষে সে দিন বিভাগের আধিকারিকদের মেয়র বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণে পয়সা খায় বিল্ডিং বিভাগ ও পুলিশ। অথচ, কাউন্সিলরের দোষ হয়। এ দিকে, কাউন্সিলরেরা জানেনই না কোনটা বৈধ, কোনটা অবৈধ।’’

কাউন্সিলরদের এ ভাবে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ায় সে বার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণের খবর বরং কাউন্সিলরেরাই সবার আগে রাখেন। পাশাপাশি, বিভাগীয় আধিকারিকদের প্রতি আঙুল তোলায় তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, ‘‘তাঁর বিভাগ নিয়মিত টাকা খেলে দায় প্রধানেরও। এটা কি অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পিঠ বাঁচানো হচ্ছে না?’’

এ দিকে, পুরসভার অন্দরের এই দায় ঠেলাঠেলির ফাঁকেই তরতরিয়ে বাড়ছে বেআইনি নির্মাণ। যেমন, পুরসভার পুজোর ছুটিতে কোথাও কোথাও অনুমতি ছাড়াই অতিরিক্ত ‘ফ্লোর’ তৈরি হয়েছে। সূত্রের খবর, কাশীপুর, ট্যাংরা, তপসিয়া, তিলজলা, রাজাবাজার, কড়েয়া, পিকনিক গার্ডেন, একবালপুর, নারকেলডাঙা, কসবা-সহ একাধিক এলাকা থেকে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ বিল্ডিং বিভাগে জমাও পড়েছে। আধিকারিকদের মতে, গলি ও বস্তি এলাকায় অবৈধ নির্মাণ বেশি হয়। ওই দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘উৎসবের এই সময়ে প্রতি বার এক শ্রেণির প্রোমোটার অসাধু কাজ করেন। সে সব খতিয়ে দেখে কাজ বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হবে।’’ মেয়র ফিরহাদ হাকিমেরও সেই একই বক্তব্য, ‘‘বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আরও কঠোর হতে হবে। দফতরকে যাবতীয় নির্দেশ দিয়েছি।’’

বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘নাগরিকেরা মেয়রের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেও সুরাহা পাচ্ছেন না। এতেই বোঝা যাচ্ছে, পুরসভা কোন পথে চালিত হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement