—প্রতীকী চিত্র।
রাতে তৃণমূলের এক যুব নেতা ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন স্ত্রী। কিন্তু পরদিন বেলা গড়াতেই মৃতের ছেলে ও স্ত্রী গিয়ে থানায় লিখিত জানিয়ে দিলেন, কারও বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগ জানাতে চান না। কেন এই সিদ্ধান্ত বদল? বিতর্ক শুরু রাজারহাটে।
বুধবার, লক্ষ্মীপুজোর রাতে রাজারহাটের পশ্চিম ভাতেন্ডায় সুশান্ত ওরফে শঙ্কু বেরা (৫৩) নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। রাতেই রাজারহাট থানায় মৃতের স্ত্রী প্রতিমা বেরা অভিযোগ করেন, রাজারহাট-বিষ্ণুপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের সদস্য, যুব নেতা রক্তিম কর ও তাঁর লোকজন দিনকয়েক আগে সুশান্তের ভাইকে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছিলেন। ভাইকে ছাড়াতে রক্তিমের পায়ে ধরেছিলেন সুশান্ত। তার পর থেকেই মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী রাতে করা অভিযোগে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, ওই ঘটনার পরে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে স্বামী আত্মঘাতী হয়েছেন। অভিযোগপত্রে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিও চেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারহাট থানা জানিয়ে দেয়, প্রতিমা ও তাঁর ছেলে সৌমেন বেরা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা এফআইআর করছেন না। এর পরে এলাকায় গুঞ্জন ছড়ায়, প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করানো হয়েছে। যদিও পরিবারটি কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
রাজারহাটের তৃণমূলের অন্দরের খবর, সুশান্ত তৃণমূল কংগ্রেস করতেন। তিনি ছিলেন পুরনো তৃণমূল সমর্থক। পুজোয় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তিমের লোকজন সুশান্তের ভাই বাপিকে তুলে নিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ। সে কথাই সুশান্তের স্ত্রী রাজারহাট থানায় অভিযোগে জানিয়েছিলেন। এলাকার খবর, রক্তিম নির্দেশ দিয়েছিলেন, সুশান্তদের একঘরে করতে। এমনকি, সুশান্তের সিভিক ভলান্টিয়ার ছেলে সৌমেনের চাকরি খাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। পরিবার সূত্রের খবর, ছেলের চাকরি হারানোর আশঙ্কায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন ওই ব্যক্তি। এই ঘটনাকে ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই হইচই চলছিল সুশান্তের বাড়ির তল্লাটে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সুশান্তের ভাই বাপি সপ্তমীর রাতে পুজো মণ্ডপে রক্তিমের নাম করে গালিগালাজ করেন। এর পরেই রক্তিমের তিন সঙ্গী বাপিকে বাড়ি থেকে তুলে তৃণমূলের কার্যালয়ে নিয়ে যান। অভিযোগ, সেখানে তাঁকে গালাগালি ও মারধর করা হয়। ভাইকে ছাড়াতে সুশান্ত নিজে সেখানে গিয়ে রক্তিমের পা ধরেন। কিন্তু তাঁকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, সমাধানের নামে এক পক্ষকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ আগেও উঠেছিল রক্তিমের বিরুদ্ধে।
সুশান্তের স্ত্রী প্রতিমা এ দিন বলেন, ‘‘ছেলে কাজ থেকে ফিরে দেখতে পায় আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। আমি যেখানে কাজ করি, সেখানে লক্ষ্মীপুজো ছিল। আমি তখন সেখানেই ছিলাম। এর বেশি কিছু বলার অবস্থায় আমি নেই।’’ রাতে থানায় তাঁর দায়ের করা লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার নিয়েও মন্তব্য করতে চাননি প্রতিমা।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই যুব নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য রক্তিমকে এ দিন ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও উত্তর দেননি। স্থানীয় নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি কানে এসেছে। দলে আলোচনা হবে। প্রয়োজনে তদন্ত করা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)