—ফাইল চিত্র
পাল্টে গেল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রদর্শনীতে সুভাষচন্দ্র বসুর চিঠির অনুকৃতি। রবিবার ‘নির্ভীক সুভাষ’-শীর্ষক প্রদর্শনীতে যে ছবিটি দেখা গিয়েছে, তার বয়ান তরুণ সুভাষচন্দ্রের লেখা মূল চিঠির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। ছবিটির নীচে বলা হয়েছে, সুভাষের আইসিএস থেকে ইস্তফার চিঠিটির ফ্যাকসিমিলি নেওয়া হয়েছে শিশিরকুমার বসুর লেখা ‘নেতাজি: আ পিকটোরিয়াল বায়োগ্রাফি’ বইটি থেকে। তবে এর আগে ওই চিঠির যে কপি ভিক্টোরিয়ায় ছিল, তাতে সুভাষচন্দ্রের লেখা মূল চিঠির বয়ানের সঙ্গে কিছু অমিলের কথা জানিয়েছিলেন নেতাজি রিসার্চ বুরোর চেয়ারপার্সন সুগত বসু।
সুভাষ-জীবনের একটি প্রধান অধ্যায়, দেশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সেই চাকরি থেকে ইস্তফার ঘটনা। কিন্তু সেই ইস্তফার চিঠির ভুয়ো অনুকৃতি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রদর্শিত হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে শনিবার চিঠি দিয়েছিলেন সুগতবাবু। যদিও কেন এই ভুল হল, সেই বিষয়ে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অধিকর্তা জয়ন্ত সেনগুপ্ত পরিবারের এক জনের অসুস্থতার জন্য ব্যস্ত রয়েছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির সূত্রেই খবর মিলেছে।
সুগতবাবু জানিয়েছেন, তিনি রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর চিঠির কোনও জবাব পাননি। তবে প্রদর্শনীতে দেখানো চিঠিটি বদলের খবর বিভিন্ন সূত্র মারফত পেয়েছেন। ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকই প্রদর্শনীটির নেপথ্যে সক্রিয়। নয়ডার একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রদর্শনীটি আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সংস্থার এক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের ব্যাখ্যা, তাঁরা প্রদর্শনীটি উপস্থাপনায় ছিলেন। কিন্তু, নথি সংগ্রহের দায়িত্ব তাঁদের ছিল না। তবে সুভাষচন্দ্রের আইসিএস থেকে ইস্তফার চিঠির অনুকৃতির বেশ কয়েক গুণ বর্ধিত রূপ তৈরির দায়িত্বে তাঁরাই ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহও এই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। এ দিন বিকেলে ফোন করা হলে তিনি অন্য একটি মিটিংয়ে ব্যস্ততার কথা জানিয়েছিলেন। পরে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।
গত ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের ১২৪তম জন্মদিনের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে ভিক্টোরিয়ার প্রদর্শনীটির সূচনা হয়েছিল। কিন্তু তখনকার মতো প্রদর্শনীটি বন্ধ করা হয়। এর কয়েক দিন পরে চালু করা হলেও আবার তা সাময়িক ভাবে বন্ধ করার ঘটনা ঘটেছিল। এর পরে ফের প্রদর্শনীটি চালু করার সময়ে বেশ কিছু নথির ফ্যাকসিমিলি বা দ্রষ্টব্য নেতাজি রিসার্চ বুরো থেকে প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়। সুভাষ-জীবনের নানা তথ্য এবং স্মারক নিয়ে দীর্ঘ সাত দশক ধরে কাজ করছে ওই প্রতিষ্ঠান।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক তথা ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপার্সন সুগতবাবু জানিয়েছেন, তাঁর বাবা-মা শিশিরকুমার বসু (সুভাষচন্দ্রের ভাইপো) ও কৃষ্ণা বসু লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডসে সুভাষচন্দ্রের আইসিএস থেকে ইস্তফার মূল চিঠিটি খুঁজে পেয়েছিলেন। সেখান থেকেই চিঠিটির ফ্যাকসিমিলি তাঁরা সংগ্রহ করেন। সুগতবাবু ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রদর্শনীটির নানা দ্রষ্টব্য তাঁরা কী ভাবে পেয়েছেন? ভিক্টোরিয়ার সুভাষ-বিষয়ক প্রদর্শনীর বেশ কিছু দ্রষ্টব্য নেতাজি রিসার্চ বুরোর থেকে প্রাপ্ত বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু, তাঁদের সঙ্গে ওই প্রদর্শনীর ব্যাপারে কেউ যোগাযোগ করেননি বলে সুগতবাবু জানিয়েছেন।