প্রতীকী ছবি।
তাঁর ‘অপরাধ’ ছিল দু’টি কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়া। তাদের পড়াশোনা করাতে চাওয়া। আরও ‘অপরাধ’, নিজের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে চাকরি করতে চাওয়া। অভিযোগ, এই জন্যই দিনরাত শ্বশুর-শাশুড়ির মার জুটত তাঁর। বিহারের গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় এসেও যা বন্ধ হয়নি বলে দাবি মহিলার। হাসপাতালে আয়ার কাজ নেওয়ার পরে বেধড়ক মারধর শুরু হয় দুই মেয়ের উপরে, এমনটাই পুলিশকে জানিয়েছিলেন মহিলা। অভিযোগ, বাবার বেধড়ক মার খেতে থাকা বছর ষোলোর বড় মেয়ে এক দিন নিখোঁজ হয়ে যায়! তার খোঁজ মেলেনি আজও।
সেই মেয়ে কোথায় গেল? মেয়েটা বেঁচে আছে তো? এক বছরের বেশি সময় পেরিয়েও এই সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। থানা-পুলিশ করেই দিন কাটছে মায়ের। মহিলার অভিযোগ, ‘‘পুলিশ বলেছিল, কারও সঙ্গে পালিয়েছে। কখনও বলে, মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।’’ নিখোঁজ সেই মেয়ে সন্তোষীকুমারী মণ্ডলের ২৫ নভেম্বর ১৭ বছর হয়েছে। অসহায় মা সুনীতা মণ্ডলের আর্তি, ‘‘মেয়েটার জন্মদিনেও ভাল খবর পেলাম না। শুধু জানতে চাই, বেঁচে আছে কি না।’’ পুলিশের থেকে সুরাহা না পেয়ে আদালতেও গিয়েছিলেন মহিলা। আদালত দু’মাসের মধ্যে পুলিশকে রিপোর্ট দিতে বললেও কাজ কিছুই হয়নি বলেও অভিযোগ।
ওই কিশোরীর মা জানান, ২০০২ সালে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় বিহারের সমস্তিপুরের প্রদীপ মণ্ডলের। ২০০৪ সাল থেকে বরাহনগরে ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। মহিলা বলেন, ‘‘প্রদীপ লরির খালাসির কাজ করত। রোজগারের পুরোটাই মদ আর জুয়ায় উড়িয়ে দিত। বেধড়ক মারধর করত। সংসারের অভাব সত্ত্বেও প্রদীপ চাইত না আমি কাজ করি। এর পরে সন্তোষী হয়। তখন মারধর বেড়ে যায়।’’ মহিলা বলেন, ‘‘জোর করেই বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে আয়ার কাজ নিই। প্রায়ই বাড়ি ফিরে শুনতাম, নেশা করে এসে সন্তোষীকে মারধর করেছে প্রদীপ।’’
ফের মেয়ে হয় সুনীতার। এর পরে মা এবং মেয়েদের উপরে অত্যাচার বেড়ে যায় বলে দাবি। গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের ঘটনা। সুনীতা বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে ফিরে দেখি, ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। খুলে দেখি, ছোট মেয়ে পরিধি ঘরে বসে ভয়ে কাঁপছে। প্রদীপ আর সন্তোষী নেই। কোনও মতে পরিধি বলে, তাকে আর দিদিকে বাবা খুব মেরেছে। চুলের মুঠি ধরে মারতে মারতে টেনে নিয়ে গিয়েছে সন্তোষীকে। তার পরে কী হয়েছে, উত্তর পাইনি।’’
সুনীতার দাবি, ‘‘ওই দিন অনেক রাতে প্রদীপ ফেরে। বড় মেয়ে আর ফেরেনি। বার বার মেয়ে কোথায়, জিজ্ঞাসা করলেও প্রদীপ সদুত্তর দিতে পারেনি। সেই রাতেই বরাহনগর থানায় যাই। নিজেদের ঝামেলা মিটিয়ে নিতে বলে পুলিশ। এক দিন কেটে যাওয়ার পরেও মেয়ে না ফেরায় পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। লাভ হয়নি। ছোট মেয়েকে নিয়ে এখন আলাদা থাকি।’’ এই সব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে সন্তোষীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর খোঁজ মেলেনি।
হাই কোর্টেও মামলা করেন সুনীতা। তাঁর পক্ষের আইনজীবী মৃদুল দাস বলেন, ‘‘পুলিশ হয়তো খুঁজেই দেখেনি। মামলা করার পরে পুলিশকে দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলে কোর্ট। কিন্তু ঘোরানো হচ্ছে।’’ বরাহনগর থানার কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। এই থানা ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে পড়ে। সেখানকার এক কর্তা বলেন, ‘‘চলতি মাসেই শুনানির তারিখ রয়েছে। বিহারে খোঁজ করে দেখার আবেদন জানানো হবে।’’ এক বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও আবেদন কেন আগে হয়নি? উত্তর মেলেনি।