—ফাইল চিত্র।
মেট্রো শহর হিসেবে গতি যেমন হওয়া উচিত, তা কোনও দিনই ছিল না কলকাতার। এর জন্যে দায়ী অপরিসর রাস্তা, ট্র্যাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে পথচারীদের যত্রতত্র রাস্তা পারাপার। তার সঙ্গে ফুটপাত ও রাস্তা জুড়ে দখলদারি, বেআইনি পার্কিং তো ছিলই। পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেশ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরের গতি আরও শ্লথ হয়েছিল। ভোটের মরসুমে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর লাগাতার মিটিং, মিছিল। এর জেরে পথে বেরিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
চলতি সপ্তাহের সোমবার। দুপুর ১টা। চৈত্রের চাঁদি-ফাটা রোদে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ধর্মতলামুখী লেন ধরে এগোচ্ছে এক রাজনৈতিক দলের মিছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গিয়েছে একের পর এক গাড়ি। এমনকি, যানজটের গেরোয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকাতেও বেগ পেতে হচ্ছে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে। ধর্মতলামুখী লেন তো বটেই, পাশের লেনেও ওই মিছিলের রেশ এসে পড়েছে। সেখানেই দীর্ঘক্ষণ থমকে থাকা বাসের মধ্যে বসে থাকার পরে বিরক্ত হয়েই এক বছর পঞ্চাশের ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে প্রায় ধমকের সুরেই বললেন, ‘‘বললাম মেট্রোতে চলো, শুনলে না! এমনিই আস্তে আস্তে বাস চলে, এখানে আবার মিছিল। এখন বোঝো ঠেলা!’’ বলেই পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছতে শুরু করলেন তিনি।
কলকাতায় এই ছবি নতুন নয়! সারা বছরের চেনা ভোগান্তিটা ভোটের মরসুমে আরও প্রকট হচ্ছে। ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল, মিটিংয়ে থমকে যাচ্ছে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ।
উত্তর কলকাতার যেমন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, কলেজ স্ট্রিট চত্বরে মিটিং-মিছিলের চাপ বেশি থাকে, তেমনই দক্ষিণ কলকাতায় রাসবিহারী মোড়, ঢাকুরিয়া, হাজরা-সহ বিভিন্ন রাস্তা মিছিলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলির বেশি পছন্দ। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোট এগিয়ে এলেই শহরে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ের চাপ বাড়ে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এক-একটি মিছিলের পরে শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। এর রেশ গিয়ে পড়ে শহরের সব প্রান্তেই।
এর পাশাপাশি রয়েছে বেআইনি পার্কিং ও ফুটপাত দখলের সমস্যা। কলকাতা পুরসভার নগর পরিকল্পনা দফতরের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল দীপঙ্কর সিংহের মতে, রাস্তা একেই অপরিসর। তার উপরে সেই রাস্তারই একাংশ জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ফুটপাত অনেক জায়গাতেই ছোট। সেই অপরিসর ফুটপাতও ভরে থাকে হকারের ডালা, খাবারের দোকানে। দীপঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই বললেই হয়। তাঁরা রাস্তা দিয়েই হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে।’’
দক্ষিণ কলকাতার একটি রুটের এক বাসচালক বলেন, ‘‘এমনিতেই যত্রতত্র পার্কিং, দখলদারির জন্যে বাস নিয়ে এগোনোই যায় না। তার উপরে অসচেতন লোকজন তো আছেনই! প্রায় দিনই বাসের গতি নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা হয়। যাত্রীদের নানা কটূক্তি শুনতে হয় আমাদের।’’
গড়িয়ার বাসিন্দা সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘‘ই এম বাইপাস দিয়ে তবু যাতায়াত করা গেলেও শহরের অন্যান্য রাস্তায় গাড়ি চালানোই রীতিমতো কষ্টকর। এমনিতেই সরু রাস্তা, তার উপরে যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পারাপার করেন মানুষ! আর এখন তো তার সঙ্গে জুড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল।’’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে কলকাতা পুলিশের (ট্র্যাফিক) কর্তাকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।