Dhauli Express

হাতে টিকিট, অথচ সিটের হদিশ নেই! ট্রেনে উঠে রোজ রোজ হেনস্থা যাত্রীদের

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন হেনস্থারই শিকার হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বহু যাত্রী। মঙ্গলবার একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন পার্থ মুখোপাধ্যায় নামে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:০৫
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

হাতে কনফার্ম টিকিট। সেখানে লেখা কামরা এবং সিট নম্বর। অথচ নির্দিষ্ট সেই কামরার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরেও হদিশ মিলছে না টিকিটে উল্লেখ করা সিটের! বিভ্রান্ত যাত্রী সিট খুঁজে না পেয়ে টিকিট পরীক্ষকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তিনি অনেক হিসেবনিকেশ করে অন্য কামরায় একটা সিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এর পর লটবহর নিয়ে সেই কামরায় যাওয়া। সব সময়ে যে সিট সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে তা-ও নয়। চলন্ত ট্রেনেই মালপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর হয়তো মিলছে বসার জায়গা।

Advertisement

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন হেনস্থারই শিকার হচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বহু যাত্রী। মঙ্গলবার একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন পার্থ মুখোপাধ্যায় নামে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। কর্মসূত্রে ভুবনেশ্বরে থাকেন তিনি। ভুবনেশ্বর যাওয়ার জন্য তিনি মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারির একটি টিকিট কেটেছিলেন ১২৮২১ নম্বর আপ ধৌলি এক্সপ্রেসে। তাঁর টিকিট কনফার্ম ছিল— সি-১ কামরায় সিট নম্বর ৬৬। বুধবার পার্থবাবু বলেন, ‘‘ট্রেন হাওড়ার প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পর সি-১ কোচে উঠলাম। কিন্তু তার পর রীতিমতো বেকুব বনে গেলাম। গোটা কামরা খুঁজে দেখি, ৬৪ নম্বর পর্যন্ত সিট আছে। অথচ আমার সিট নম্বর ৬৬!”

ভুল কামরায় উঠে পড়েছেন ভেবে ফের এক বার সবাইকে জিজ্ঞাসা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, সি-১ কামরাতেই তিনি উঠেছেন। তা হলে? পার্থবাবুর কথায়, ‘‘প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো টিটিই-কে দেখে তাঁর কাছে গেলাম। তাঁকে আমার ই-টিকিট দেখাই। তিনি সব দেখে হাতের রিজার্ভেশন লিস্ট মিলিয়ে আমাকে বলেন সি-৩ কামরায় ৩১ নম্বর সিটে বসে পড়তে।” পার্থবাবু ‘ভাগ্যবান’, সঙ্গে সঙ্গে টিকিট পরীক্ষক একটা সিটের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোথায় ছিলেন মমতা, খোঁজ রাখতেন তাপসের? তীব্র আক্রমণে বিজেপি-বাম-কংগ্রেস

কিন্তু তার কয়েক দিন আগেই পার্থবাবুর থেকে খারাপ অভিজ্ঞতা হয় এক মহিলা যাত্রীর। বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে তিনিও যাচ্ছিলেন ভুবনেশ্বর। টিকিটে উল্লেখ করা কোচে উঠে দেখেন নির্দিষ্ট সিট নেই। ও দিকে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বৃদ্ধ বাবাকে মালপত্রের সঙ্গে ট্রেনের কামরাতেই দাঁড় করিয়ে তিনি দৌড়ন টিটিই-র খোঁজে। কিন্তু টিটিই-র দেখা পাওয়ার আগেই ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় ফের উঠে পড়েন ট্রেনে। খড়্গপুর পৌঁছনোর কিছু আগে টিটি-র দেখা পান। তিনি আরও দু’টি কামরা ছাড়িয়ে অন্য একটি কামরায় বসার ব্যবস্থা করেন।

আরও পড়ুন: নজরদারি আরও আঁটসাঁট, বাংলার প্রশ্নপত্র ‘ফাঁসে’ তদন্তে পর্ষদ

শুধু যাত্রীরা নন, দক্ষিণ-পূর্ব শাখার অনেক টিকিট পরীক্ষকও স্বীকার করেন এই সমস্যার কথা। এক টিকিট পরীক্ষক বলেন, ‘‘বেশি সমস্যা হচ্ছে ধৌলির মতো মাঝারি দূরত্বের ট্রেনে, যেখানে এসি চেয়ার কার রয়েছে।” তাঁর কথায়, ‘‘বহু দিন আমরা ট্রেনে ওঠার সময় দেখছি, এসি চেয়ার কার কোচের বদলে এসি থ্রি টিয়ার কোচ চলে এসেছে। ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সাধারণত এসি চেয়ার কারে ৭৩ জন যাত্রীর বসার সিট থাকে। কিন্তু তার বদলে থ্রি টিয়ার কোচে বসার সংস্থান রয়েছে ৬৪ জনের।”

অন্য দিকে, রেলের বুকিং অফিস টিকিট বুক করছে ৭৩ পর্যন্ত সিট আছে ধরে নিয়ে। ফলে যাত্রীরা ট্রেনে উঠে সিট খুঁজে পাচ্ছেন না। সমস্যার কথা স্বীকার করেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অন্য এক আধিকারিকও। যদি কোনও দিন গোটা ট্রেনে কোনও ফাঁকা সিট না থাকে, তা হলে সিট না পাওয়া ওই যাত্রীদের কী ব্যবস্থা হবে? ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘তা হলে ওই থ্রি টিয়ার কোচে একটু চাপাচাপি করে বসে যেতে হবে। না যেতে চাইলে তিনি টাকা ফেরত নিয়ে নিতে পারেন।”

আরও পড়ুন: পুলিশি নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে সিএএ-র বিরুদ্ধে জনস্রোত চেন্নাইয়ে

যদিও রেলের এই টাকা ফেরত নেওয়ার যুক্তি মানতে চাইছেন না যাত্রীরা। সুপর্ণা নায়েক নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘কনফার্ম টিকিট পাওয়াই যেখানে দুষ্কর সেখানে সবাই চায় কোনও মতে গন্তব্যে পৌঁছতে। তাই সমস্যায় পড়েও আমরা টাকা ফেরত নিই না বা বিশেষ প্রতিবাদ করতে পারি না। আর সেই সুযোগটাই নিচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষ।”

দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কখনও কখনও এ রকম সমস্যা হয়। নির্দিষ্ট কামরা যাত্রার উপযুক্ত না থাকলে তার বদলে থ্রি টিয়ার কোচ ব্যবহার করা হয়। তবে আমরা যাত্রীদের বিকল্প সিট দেওয়ার ব্যাবস্থা করি।”

আরও পড়ুন: ‘ভারত আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে না’, সফরের আগে সুর কাটল ট্রাম্পের মন্তব্য

অন্য এক আধিকারিক বলেন, আগেকার আইসিএফ কোচ থেকে আধুনিক এলএইচবি কোচে পরিবর্তন করা হচ্ছে সমস্ত ট্রেন। ফলে রেলের কোচের ভাঁড়ার বাড়ন্ত। আর সেই কারণেই সমস্যা। যদিও যাত্রীদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার, রেলের নিজের সমস্যার জন্য যাত্রীরা হেনস্থার শিকার হবেন কেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement