এসএসকেএমে মমতা জোর দিলেন চিকিৎসক থেকে রোগী— সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। ছবি: ফেসবুক।
অনেক হাসপাতাল টাকার জন্য মৃত রোগীদের দেহ তিন-চার দিন আইসিসিউতে রেখে দেয়। অভিযোগ করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি একই সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বটে। সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে বলেই দিলেন মমতা। পাশাপাশিই তিনি জোর দিলেন চিকিৎসক থেকে রোগী— সকলের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। বার বার মনে করিয়ে দিলেন, টাকাই সব নয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্তত তিন-চার দিন গ্রামে গিয়ে পরিষেবা দেওয়ারও পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই তিন-চার দিন মাসে না বছরে, তা স্পষ্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে চিকিৎসক মহল ধরে নিচ্ছে, তিনি মাসে তিন-চার দিনের কথাই বলেছেন।
প্রবীণ নার্সদের বিশেষ পদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতার। তিনি বলেছেন, ‘‘সিনিয়র সিস্টারদের নাম ঠিক করছি। ৪৫ বছর বয়সে যাঁরা পৌঁছেছেন, তাঁদের একটা কিছু থাকা উচিত। অনেক দিন কাজ করতে করতে চিকিৎসা পদ্ধতি জেনে নেন তাঁরা।’’
সোমবার এসএসকেএম হাসপাতালে ছ’টি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে চিকিৎসকদের ঢালাও প্রশংসা করেন তিনি। মনে করিয়ে দেন, কী ভাবে রাত জেগে চিকিৎসা করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এর পরেই তিনি একহাত নেন কিছু (বেসরকারি) হাসপাতালকে। সেখানে যে চিকিৎসকদের উপরেও জোরজুলুম করা হয়, সে কথাও বলেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে ভাবে, শুধু টাকা! অনেক হাসপাতাল আছে। অনেক টাকা দেয়। তাদের কমিশনও দিতে হয়। শাড়িও কিনে দিতে হয়। জোর করে পেসমেকার বসাতে হয়।’’ তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী সটান বলেন, ‘‘আইসিসিউতে থাকার প্রয়োজন না হলেও তিন দিন বডি রেখে দেয় বিল তোলার জন্য।’’ তবে পাশাপাশিই তিনি জানান, সব হাসপাতাল সমান নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আবার এ রকমও রয়েছে, যারা ভাল হাসপাতাল। সঙ্কল্প নিয়ে কাজ করে।’’
এসএসকেএমের ক্রমসূচির মঞ্চেই ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এবং স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা। তাঁদের দিকে তাকিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমরা আলোচনা করি, কিছু চিকিৎসক অনেক টাকা আয় করেন। এক জন দিনে ৫০টা হার্ট সার্জারি করেন।’’ সেই প্রসঙ্গেই তিনি ওই শ্রেণির চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মমতা বলেন, ‘‘কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন! যদি শারীরিক ভাবে সুস্থ না হন, মানসিক সুস্থতা না থাকে, কথা বলার জন্য পরিবার না থাকে, তা হলে একাকিত্ব আপনার জীবন গ্রাস করে! সকালে পেট ব্যথা, দুপুরে মাথায় ব্যথা, রাতে ঘুমে ব্যথা, কোনটা ভাল জীবন? কোনটা খারাপ? খেলেই বা কত খাব? মণিমুক্তো খাব? তাতেও এত টাকা লাগে না! আপনি বাথরুমে পড়ে গেলে তখন কেউ তোলারও থাকবে না।’’
চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নিয়ে চিকিৎসকদের কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘একটা মানুষ যদি রোজ ভয় পান, মরে যাবেন, তা হলে তিনি এমনিই মরে যাবেন। আমাদের কাজ হাসিমুখ দেখানো, তাঁকে বলা যে, আপনি ভয় পাবেন না। ভাল হয়ে যাবেন। একটু হাসিমুখে কথা বললে যদি মুখ, হৃদয় সুন্দর দেখায়, আঁখি জ্বলজ্বল করে ক্ষতি কী?’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা এটাই শিখেছি, সিরিয়াস রোগীর কাছে সিরিয়াস কথা বলতে নেই। মানসিক আঘাত পেলে তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। অবসাদে চলে যাবেন। আমি তাঁকে অবসাদে নিয়ে যাব? না কি সুস্থ করে তুলব?’’
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র চিকিৎসকদেরও কিছু নিদান দেন। জানান, অন্তত তিন-চার দিন প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা করলে সকলের উপকার হবে। তাঁর কথায়, ‘‘দল পাঠাও ‘রোটেশন’ অনুযায়ী। বেশি দিন না, শিবির করে রিমোট এরিয়ায় তিন-চার দিন জুনিয়ররা পরিষেবা দিয়ে আসুন। এর জন্য কেরিয়ারে আলাদা সুবিধা পাবেন। এটা করলে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক মানুষ খুশি হবেন।’’