মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
এসেছিলেন রুটিন চেক আপ করাতে। কিন্তু প্রয়োজন বুঝে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডান কাঁধে ছোট্ট অস্ত্রোপচার করতে হল চিকিৎসকেদের। শুক্রবার সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ বিষয়টি জানান এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিট নাগাদ হাসপাতাল থেকে বার হন মুখ্যমন্ত্রী। বেরিয়েই তিনি জানান, একেবারেই সুস্থ রয়েছেন। এর পর সকল ধর্মের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে উঠে পড়েন গাড়িতে। মমতা বেরনোর কিছু ক্ষণ আগে এসএসকেএমে এসেছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই হাসপাতাল ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী।
গত ২৭ জুন জলপাইগুড়ি থেকে ওড়ার পর পরই দুর্যোগের মধ্যে পড়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হেলিকপ্টারটিকে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হন পাইলট। সেই সময়েই মমতার পায়ে এবং কাঁধে চোট লেগেছিল। মমতা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘রুটিন চেক আপ করতে গিয়ে একটা সমস্যা ধরা পড়ে। (বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে) হেলিকপ্টার থেকে নামার সময় হয়েছিল। পায়ের সঙ্গে কাঁধেও লেগেছিল। সেটা নিরাময় করে দেন চিকিৎসকেরা।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানান তিনি একেবারেই সুস্থ রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তোমরা চিন্তা কোরো না। আমি একদম ঠিক রয়েছি। এত ক্ষণ গল্প করছিলাম ওঁদের সঙ্গে। চিকিৎসকদের, হাসপাতালের অনেক সমস্যা থাকে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছিলাম।’’
রুটিন চেক আপের জন্য শুক্রবার দুপুরে এসএসকেএমে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষার সময়ে চিকিৎসকেরা তাঁর ডান কাঁধে পুরনো চোটের জায়গায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বোধ করেন। তার পরেই উডবার্ন ব্লকের ওটিতে মুখ্যমন্ত্রীর ডান কাঁধে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মণিময়। তাঁর কথায়, ‘‘রুটিন চেক আপের জন্য এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চেকআপের সময় তাঁর ডান কাঁধে ছোট্ট অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন বোধ করেন চিকিৎসকেরা। পুরনো চোটের জায়গাতেই ওই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। উডবার্ন ওটিতে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে।’’
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে জানিয়ে সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘নববর্ষের আগাম শুভকামনা। সকল জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে শুভকামনা জানাচ্ছি। ২০২৪ সালকে স্বাগত জানাই। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে হলেও এখন উৎসব হয়ে গিয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, পড়ুয়াদের নিয়ে অনুষ্ঠান হবে। ১ জানুয়ারি তৃণমূলের জন্মদিন। মা-মাটি-মানুষ দিবস পালন করা হয়। শেষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পংক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘সবারে করি আহ্বান। এসো উৎসুক চিত্ত, এসো আনন্দিত প্রাণ।’’
শুক্রবার এসএসকেএমে ঢোকার সময়ে মমতা জানান, রুটিন চেক আপের জন্যই তিনি এসেছেন। তাঁর শরীর একেবারেই ঠিক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘শরীর ঠিক রয়েছে। পা চেকআপ করাতে এসেছি। আমি হাঁটছি। সবই ঠিক রয়েছে। রোজ বিশ হাজার স্টেপ করছি। এমনিতে সময় পাই না। শুধু এক্স-রে করাতে এসেছি।’’ এর পর তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের নতুন বছরের শুভেচ্ছাও জানান। এও জানান, এগুলো বলে মানুষকে ‘বিরক্ত’ করার কোনও মানে হয় না। এখন সকলে সময়টা উপভোগ করুন। এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য উডবার্ন বিভাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁর এক্স-রে করা হতে পারে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে স্পেন এবং দুবাই সফর সেরে এসএসকেএমে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিদেশে থাকাকালীন বাঁ পায়ের হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন। ব্যস্ত কর্মসূচি থাকায় বিদেশ সফরে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায় ফেরার এক দিন পরেই নিজের পায়ের চিকিৎসা করাতে যান তিনি।
তার পর গত ২৭ জুন জলপাইগুড়ি থেকে আকাশে ওড়ার পরই দুর্যোগের মধ্যে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মুখে পড়ে ওই হেলিকপ্টারটি। দুর্ঘটনা এড়াতে বিমানের জরুরি অবতরণ করানো হয় সেবকে, বায়ুসেনার ঘাঁটিতে। সেখানেই কপ্টার থেকে তড়িঘড়ি নামতে গিয়ে কোমরে এবং পায়ে চোট পান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সে সময় কাঁধেও চোট লেগেছিল। সেই সময় থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। যে কারণে কয়েক দিন হাসপাতালে ভর্তিও থাকতে হয়েছিল তাঁকে। জুন মাসে যে পায়ে চোট পেয়েছিলেন তিনি, পরে বিদেশ সফরে সেই পায়েই চোট পেয়েছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছিল। পরে নভেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে ছিলেন, তাঁর পায়ের আঘাতের ভুল চিকিৎসা হয়েছিল এসএসকেএমে। যদিও এসএসকেএমের তরফে সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।