প্রতীকী ছবি।
খেলাধুলো ও যুব কল্যাণ সংক্রান্ত কাজের জন্য সরকারের থেকে অনুদান পেয়েছে যে সমস্ত ক্লাব, তাদের এ বার নামতে হবে ডেঙ্গি মোকাবিলাতেও।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নথিভুক্ত ক্লাবগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। খেলাধুলোর পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং যুব কল্যাণ সংক্রান্ত কাজে সেই টাকা খরচ করার কথা বলা হয়েছিল। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের প্রায় ২৮ হাজার ক্লাব এখনও পর্যন্ত সেই সরকারি অনুদান পেয়েছে। তবে কয়েক মাস আগে রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ডেঙ্গি মোকাবিলায় ওই ক্লাবগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে।
গত এপ্রিলে দফতরের তৎকালীন প্রধান সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন ওই নির্দেশিকা জারি করেন। জুলাইয়ে সেই নির্দেশিকার সূত্র ধরেই দফতরের কমিশনার আরও একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, অনুদান পাওয়া সমস্ত ক্লাবকে ডেঙ্গি মোকাবিলার পাশাপাশি, স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির করার কাজও করতে হবে। কোন কোন ক্লাব সেই কর্মসূচি নিচ্ছে, সে সম্পর্কে প্রতি মাসে দফতরকে রিপোর্ট পাঠাতে হবে জেলা যুব আধিকারিকদের।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য কয়েক বছর আগেই রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে বিভিন্ন দফতর ও সংস্থাকে নিয়ে ‘কোর গ্রুপ’ তৈরি করা হয়েছিল। তাদের পরামর্শ ও নির্দেশিকা মোতাবেক রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ শুরু হয়। পুর ও পঞ্চায়েত এলাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের সহযোগিতায় শুরু হয় ভেক্টর কন্ট্রোলের কাজ। পাশাপাশি, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ, মশার লার্ভা ধ্বংস ও ডেঙ্গি সম্পর্কে সচেতনতার প্রচারের কাজে বিশেষ গুরুত্ব দেন জেলাশাসকেরাও। কিন্তু এত কিছুর পরেও রাজ্যে জুড়ে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ও তার জেরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অনেক সময়ই অভিযোগ উঠছে যে, বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন পুরকর্মীরা। কোথাও আবার নজরের বাইরেই রয়ে যাচ্ছে মশাবাহিত রোগের আঁতুড়ঘর।
ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের জারি করা নির্দেশিকার প্রতিলিপি।
স্থানীয় প্রশাসনের তরফে অনেক সময়ে ছোট ছোট এলাকা ধরে প্রতিনিয়ত প্রচার সম্ভব হয় না। তাই এ বার নিজেদের এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় অনুদান পওয়া ক্লাবগুলিকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ক্লাবগুলি নিজেদের এলাকায় কোথায় কী অবস্থা রয়েছে, তা নিয়ে সব চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল। তাই তারা সহজে বুঝতে পারবে কোন জায়গায় মশাবাহিত সমস্যা বেশি রয়েছে।’’ এক জেলা যুবকল্যাণ আধিকারিক জানাচ্ছেন, ব্যানার-লিফলেট-সহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার চালিয়ে মূলত ডেঙ্গি সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করবে ক্লাবগুলি। বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে এলাকায় ব্লিচিং, মশা মারার তেলও ছড়াতে পারবে ওই ক্লাবগুলি। প্রয়োজনে সাহায্য করবে স্থানীয় প্রশাসন।
গত কয়েক বছরে ডেঙ্গির মরসুমে প্লেটলেটের আকাল দেখা দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ বার তাই রক্তদান শিবির আয়োজনেরও নিদান দেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিংবা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে স্থানীয় ক্লাবগুলি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলে সরকারি স্তরে কোথায় কত পরিমাণ রক্ত রয়েছে, সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে। এমনই মত এক প্রশাসনিক কর্তার।