TMC

অনুদানের অর্থে ক্লাবঘর ও বিনোদন, কোভিডে চুপ

সরকারি খাতায় দেখানো হয়েছে, ক্লাবটি ১৯৮৮ সালে তৈরি। ঠিকানা লেখা, ২৬এ রতন নিয়োগী লেন। এক দুপুরে ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেল, আদতে একটি বসতবাড়ি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৬:৪৯
Share:

প্রতীকী চিত্র।

প্রশ্ন: ক্লাবগুলোকে রাজ্য সরকারের দেওয়া পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছেন?

Advertisement

এক ক্লাব কর্তা: হ্যাঁ।

প্রশ্ন: টাকাটা কী কাজে খরচ করলেন?

Advertisement

ক্লাব কর্তা: ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা আছে, ক্লাবের জন্য ঘর নেব।

প্রশ্ন: ক্লাবঘর নেই? তা হলে টাকা পেলেন কী ভাবে? টাকা পেতে তো নির্দিষ্ট ঠিকানা লাগে!

ক্লাব কর্তা: আমাদের এক সদস্যের বাড়ির ঠিকানা দেখিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: ওই অনুদান তো ক্রীড়া ও অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচিতে খরচ করার কথা! সেই টাকা দিয়ে ক্লাবঘর কিনবেন?

ক্লাব কর্তা: ওই টাকাই যে ঘর কেনার জন্য ধরে রাখা আছে, ঠিক তা নয়। ওখান থেকে হয়তো কিছু খরচ হয়েছে। পরে অন্য জায়গা থেকে কিছু অনুদান এসেছে। কাজ কিছু হয়েছে অবশ্যই। রক্তদান শিবির, পাড়ার ফুটবল খেলায় বয়স্কদের সংবর্ধনা দিয়েছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেখানে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাড়ার ক্লাবগুলিকে বার বার সক্রিয় হতে বলছে, সেখানে সরকারি অনুদান পাওয়া বহু ক্লাবের ভূমিকা এই রকম। সামাজিক কর্মসূচিতে খরচের বদলে কোনও ক্লাব আবার অনুদানের টাকায় তিনতলা বাড়ি তুলেছে। ক্লাবের দাদাদের পাকা আয়ের সংস্থান করতে সেটিকেই অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া শুরু হয়েছে। কোনও ক্লাবঘর খুলেছে ‘মাল্টি জিম’! অভিযোগ, কয়েকশো এমন ক্লাব রয়েছে, যাদের ঘরই নেই! অডিট রিপোর্ট তৈরি দূর, খরচের ন্যূনতম হিসেবও তারা রাখে না। ফলে ওই সব ক্লাব করোনায় প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়ানো নিয়েও ভাবছে না।

সরকারি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের বিধায়ক ও কাউন্সিলরদের বাছাই করা ক্লাবকে টাকা দিতেই ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারের ২২৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। টাকা পেয়েছিল কলকাতা পুর এলাকার প্রায় ১০৫০টি ক্লাব। শুরুতে যে ক্লাবটির কথা লেখা হয়েছে, বদ্রীদাস পল্লিবাসীবৃন্দ নামে সেই ক্লাবটিও রয়েছে ওই অনুদান প্রাপকের তালিকায়।

সরকারি খাতায় দেখানো হয়েছে, ক্লাবটি ১৯৮৮ সালে তৈরি। ঠিকানা লেখা, ২৬এ রতন নিয়োগী লেন। এক দুপুরে ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেল, আদতে একটি বসতবাড়ি। ক্লাবের নাম ধরে ডাকাডাকি করতে বেরিয়ে এলেন এক ব্যক্তি। তিনিই জানালেন, রাস্তাতেই বিকেল-সন্ধ্যায় চেয়ার পেতে বসেন তাঁরা। যোগাযোগ হল ক্লাবের সম্পাদক কৌশিক সাহার সঙ্গে। এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের কাজ করা কৌশিকবাবুর দাবি, “ঘর থাকুক আর না থাকুক, পরিচিতি থাকলে অনুদান পেতে কারওরই সমস্যা হয় না। বহু ক্লাব এ ভাবেই টাকা পেয়েছে।”

খন্না মোড়ের শিবাজী সঙ্ঘেরও ক্লাবঘর নেই। শুধুমাত্র সরস্বতী পুজোর সময়েই তাঁদের চেয়ার পেতে বসতে দেখা যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ক্লাবের মূল কর্মকর্তা কাঞ্চন সাধুখাঁ প্রশ্ন শুনে বললেন, “সরস্বতী পুজোটা করি। আর কী করব? এখন অন্য জায়গায় রয়েছি, পরে কথা হবে।” আবার মুচিবাজার, বাসন্তী কলোনি এলাকার অন্তত ন’টি ক্লাবের মাথা এক জন! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তির দাবি, “আমার কিছু যোগাযোগ আছে। তাই ছেলেরাই ক্লাবের মাথা করে দিয়েছে। টাকার হিসেব ওরাই রাখে।”

বেহালা চৌরাস্তার কাছে যুব সম্মিলনী নামে একটি ক্লাবের অনুদান মিলেছে পাঁচ লক্ষ টাকা। ঠিকানা ধরে খোঁজ করেও ক্লাবের হদিস পাওয়া গেল না। অস্তিত্ব মেলেনি পর্ণশ্রী রায়পাড়া ক্লাব, কসবা সেতু মিলন সঙ্ঘ, ভবানীপুর অ্যাথলেটিক্স, যাদবপুরের নব মিলন সঙ্ঘের মতো কিছু ক্লাবের। নবপল্লি নামে কালীঘাট রোডের একটি ক্লাবের কর্মকর্তার আবার দাবি, “যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, সে তো কবেই শেষ! ক্লাবটাকে সুন্দর করা হয়েছে, আর চার বছর পিকনিক করেছি।” একই দাবি, দাসপাড়া প্রভাতী সঙ্ঘের কর্মকর্তা সঞ্জয় নায়েকেরও। তিনি বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের টাকায় ক্লাবের দোতলা করেছি। করোনায় কিছু করার মতো অবশিষ্ট নেই!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement