কলকাতার বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ে একাধিক বার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দূষিত নগরীর তালিকাতেও এই মহানগরী স্থান পেয়েছে উপরের দিকেই। কিন্তু এমন শহরেই গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে আটটি দূষণ পরিমাপক কেন্দ্র। শুধু তা-ই নয়, যে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার মাত্রা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বারংবার সতর্ক করছেন, কলকাতার দূষণ পরিমাপের তালিকায় সেটির জায়গাও নিয়মিত নয়!
মহানগরের বায়ুদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে। যার ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে কয়েক দফা নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, বন্ধ থাকা আটটি দূষণ পরিমাপক কেন্দ্র অবিলম্বে চালু করতে হবে। বায়ুদূষণ মাপার ক্ষেত্রে ২.৫ মাইক্রন ঘনত্বের সূক্ষ্ম ধূলিকণাও (পিএম ২.৫) পরিমাপ করতে হবে।
বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বাড়লে শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের রোগ বাড়বে। এ ধরনের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সূক্ষ্ম ধূলিকণাই সব চেয়ে বেশি দায়ী। বর্তমানে পর্ষদের যে পরিমাণ ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে রোজ ১০ মাইক্রন ঘনত্বের ধূলিকণা (পিএম ১০) মাপা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, সাধারণ ধূলিকণা শ্বাসনালীর রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু পিএম ১০ অনেক সময়ে নাকের ভিতরে রোমে আটকে গেলেও পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম ধূলিকণা সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে ফুসফুস পর্যন্ত।
পর্ষদ সূত্রে খবর, শহরের বায়ুদূষণের মূল উৎস যানবাহন। অথচ, এ শহরে গাড়ির দূষণ মাপার পর্যাপ্ত কেন্দ্র নেই বলেই অভিযোগ উঠেছে। তা অবশ্য মেনেও নিয়েছেন পর্ষদ-কর্তাদের একাংশ। পরিবেশ আদালতের নির্দেশ, প্রতি পাঁচ কিলোমিটার অন্তর একটি করে গাড়ির দূষণ মাপার কেন্দ্র রাখতে হবে। গাড়ি পরীক্ষার তথ্য সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে পর্ষদের সার্ভারে তুলে দিতে হবে। তবে পর্ষদ-কর্তাদের অনেকেই বলছেন, গাড়ির পাশাপাশি নির্মাণস্থল, ভাঙাচোরা রাস্তা এবং দূষিত কলকারখানা থেকেও প্রচুর দূষণ ছড়ায়। কিন্তু তা মোট দূষণের কতটা, তা নির্দিষ্ট ভাবে মাপা হয় না। এ দিন পরিবেশ আদালত বলেছে, মহানগরের দূষণ পরিমাপের ক্ষেত্রে উৎসগুলি চিহ্নিত করতে হবে এবং কোন উৎস কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে তা নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ে দ্রুত পর্ষদের বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টও জমা দিতে বলেছে পরিবেশ আদালত।
পরিবেশবিদদের অনেকেই বলছেন, কোন উৎস থেকে কতটা দূষণ ছড়াচ্ছে, সেই তথ্য জনসমক্ষেও প্রকাশ করা উচিত। তার ফলে সচেতনতা বাড়বে। শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে মামলার আবেদনকারী, পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘দূষণ কমাতে গেলে জনগণের সাহায্যও দরকার। তাই এ সব তথ্য প্রকাশ করা উচিত।’’
পর্ষদ সূত্রে খবর, গত কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ মাপার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ছিল না পর্ষদের। তা নিয়ে বিশেষ নড়াচড়াও হয়নি। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এ নিয়ে তৎপর হয়েছেন পর্ষদ-কর্তারা। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে গোটা রাজ্য জুড়েই বায়ুদূষণ মাপার ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশকর্মীদের অনেকে অবশ্য বলছেন, বর্তমানে পর্ষদ মানবচালিত পরিমাপক কেন্দ্রগুলি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন করে চালু রাখে। এর ফলে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা পালন করা হলেও পর্যাপ্ত তথ্য মেলে না। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মানবচালিত কেন্দ্রগুলিও রোজ চালু রাখতে হবে।