হাতে হাতে: পুজোর বাজার করতে বেশির ভাগ ক্রেতারই ভরসা প্লাস্টিকের ব্যাগ। মঙ্গলবার, নিউ মার্কেট ও ধর্মতলা চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক বর্জনের কথা একাধিক বার বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ, ২ অক্টোবর সে বিষয়ে ফের ঘোষণা করার কথা তাঁর। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই নিয়মে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন শহরের ক্রেতা-বিক্রেতারা?
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানতে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু ধাপে ধাপে নয়। আইন করে প্লাস্টিক ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেই সব দিক থেকে সুবিধা হয় বলে দাবি শহরের বিভিন্ন প্রান্তের দোকান-বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর। কারণ তখন প্লাস্টিক দেওয়ার জন্য তাঁদের আর ক্রেতাদের ‘চাপের’ মুখোমুখি হতে হবে না।
মঙ্গলবার ধর্মতলা থেকে গড়িয়াহাট ঘুরে দেখা গেল, জিনিসপত্রে ভরা বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিকের ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘুরছেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের অনেকই অবশ্য বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন কাপড়ের ব্যাগ। যেমন কলকাতায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা বিহারের বাসিন্দা বিনোদ কুমার ধর্মতলায় কেনাকাটা করেই জিনিসপত্র ভরছিলেন কাপড়ের ব্যাগে। তিনি বললেন, ‘‘প্লাস্টিকের জন্য দূষণ হচ্ছে এটা তো এখন বাচ্চারাও জানে। আমাদের বড়দের আগে সচেতন হওয়া উচিত। আইন করে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা দরকার।’’
পুজোয় দোকানের নাম ছাপানো স্বচ্ছ প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করেছেন নিউ মার্কেটের দোকানি নবীন ইসরানি। তবে সরকার যদি নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম করে তা মানতে আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। সেখানকারই আর এক দোকানি প্রেম শর্মা অবশ্য কাগজের ব্যাগেই ফিরতে চান। তাই ইতিমধ্যে ওই ব্যাগের অর্ডারও দিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। কিন্তু ধর্মতলা চত্বরের ফুটপাতে বসা দোকানিরা অবশ্য এখনও জানেন না তাঁদের ঠিক কী করতে হবে। ছোটদের জামা-প্যান্ট নিয়ে ফুটপাতে বসা দোকানি তাহেরা বিবি বলেন, ‘‘আগে তো খবরের কাগজে মুড়েই জামা দিতাম। আবার তা-ই করব।’’
শহরকে দূষণমুক্ত করতে তাঁরাও চান। কিন্তু ক্রেতা ধরে রাখতে বাধ্য হয়েই প্লাস্টিক ব্যাগে মাছ দিতে হয় বলেই দাবি করলেন গড়িয়াহাটের মাছ বিক্রেতা আনন্দ মান্না। তাঁর কথায়, ‘‘এক-দেড় হাজার টাকার মাছ কেনার পরে ক্রেতা বলছেন ব্যাগ আনেননি। তখন বাধ্য হয়েই প্লাস্টিক ব্যাগ দিতে হয়। না হলে তো ক্রেতা অন্য দোকানে চলে যাবেন।’’ পুরোপুরি বন্ধ না করে ভালমানের প্লাস্টিকের ব্যাগ বিক্রেতাদের ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন অফিস ফেরত মাছ কিনতে আসা লিলি দেব। তাঁর কথায়, ‘‘প্রয়োজনে বিক্রেতারা ওই ব্যাগের দাম নিয়ে নেবেন আমাদের থেকে।’’
নিউ মার্কেটের ফুলের দোকানের কর্মী তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমরা আর প্লাস্টিক ব্যাগ দেব না বলেই ঠিক করেছি। তবে যেখানে ব্যাগ উৎপাদন হচ্ছে সেখানে আগে বন্ধ করা দরকার।’’ আবার লেক মার্কেটে আনাজ কিনতে আসা অমিত রায় অবশ্য প্লাস্টিক ব্যাগ দেওয়ার জন্য শুধু বিক্রেতাদের দায়ী করতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘আগে বাড়িতে বাজারের নির্দিষ্ট ব্যাগ থাকত। আমরা যদি ফের পুরনো অভ্যাসে ফিরে আসি, তা হলে তো বিক্রেতারা জোর করে প্লাস্টিকের ব্যাগ দেবেন না।’’