প্রতীকী ছবি।
প্রথমে প্রতারণা করা হয়েছিল। পরে সেই প্রতারিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দখল করে চলছিল আরও প্রতারণা। চিৎপুর এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে এমন তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
ওই ঘটনায় চিৎপুর থানার পুলিশ বুধবার গ্রেফতার করেছে তিন জনকে। ধৃতদের নাম অভিজিৎ দে, সুমিত্রা সাহা এবং জয়শ্রী দাস। প্রথম দু’জনের বাড়ি হরিদেবপুরে, অন্য জনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ছ’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ধৃতদের কাছ থেকে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েক জন প্রতারিতের অ্যাকাউন্টও। তাঁরা ঋণ নেবেন বলে ওই চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে এক জন অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীও রয়েছেন। তাঁর বকেয়া বিমার টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিজ্ঞানীর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের দখল নিয়েছিল ওই প্রতারকেরা বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের অনুমান, এ ভাবে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারণা চক্র। তিন জন গ্রেফতার হলেও বাকিরা পলাতক।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত জানুয়ারিতে চিৎপুর লকগেট এলাকার এক বাসিন্দা, মহম্মদ বিলালউদ্দিন থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে একটি সংস্থা তাঁর কাছ থেকে প্রায় তিন লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছে। কয়েক দফায় চক্রটি ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কখনও চেকের মাধ্যমে, কখনও অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
যার ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বেশ কয়েকটি ফোন নম্বর অভিযোগকারীর থেকে মেলে। সেই সঙ্গে খতিয়ে দেখা শুরু হয়, কোন কোন অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢুকেছে। তাতে পাঁচটি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মেলে। দেখা যায়, অভিযোগকারীর টাকা ঢুকেছে সেই সব অ্যাকাউন্টেই। এর পরে তদন্ত শুরু হয় অ্যাকাউন্টগুলির মালিক কে, তা জানতে। দেখা যায়, একটি অ্যাকাউন্টের মালিক এক বিজ্ঞানী।
এক পুলিশ অফিসার জানান, তখনই সন্দেহ হয়। ওই বিজ্ঞানীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, বিমার বকেয়া টাকা এবং ঋণ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁর থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনকি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দখল করে নিয়েছে!
তদন্তকারীরা জানান, ওই বিজ্ঞানীর সঙ্গে প্রতারকেরা যে নম্বর থেকে কথা বলেছে, তার সঙ্গে মিল রয়েছে বিলালউদ্দিনের দেওয়া ফোন নম্বরের। এর পরেই সেই ফোন নম্বর এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে তিন জনকে ধরা হয়।
পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, তারা ফোনে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে ফাঁদ পাতত। এর পর বিভিন্ন বাহানায় টাকা হাতিয়ে নিত। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রতারিতের অ্যাকাউন্টের দখল নিয়ে সেখানেও অন্যকে প্রতারণা করে পাওয়া টাকা জমা করত।