—প্রতীকী ছবি।
প্রায় ছ’ বছর ধরে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন চললেও শিশুদের জন্য প্রস্তাবিত ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টার’ কিছুতেই রাজ্যে হয়ে উঠছে না।
দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে ওই কেন্দ্র হওয়ার কথা। বহু রাজ্যে ইতিমধ্যে তা তৈরিও হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এ রাজ্যে চিহ্নিত হয়েছিল ১২টি কেন্দ্র। প্রথমে কেন্দ্র-পিছু ২৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন করলেও পরে তা বাড়িয়ে কেন্দ্র-পিছু ৭৫ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মন্ত্রক জানিয়েছিল, প্রয়োজন পড়়লে কেন্দ্র-পিছু দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে তারা প্রস্তুত।
কেন্দ্রগুলি কেন হচ্ছে না, তা নিয়ে গত কয়েক বছর যাবৎ দিল্লিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্তারা প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। কেন্দ্রের চাপে শেষে চলতি ডিসেম্বরে ১২টির মধ্যে পাঁচটি ‘আর্লি ইন্টারভেনশন’ কেন্দ্র চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু একটি কেন্দ্রও শুরু হয়নি।
ওই পাঁচটি কেন্দ্র যথাক্রমে বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে চালু হওয়ার কথা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কিছুটা দেরি হয়েছে নানা কারণে। তবে পাঁচটি কেন্দ্র দ্রুত চালু হবে।’’
জন্মের পরে সাধারণত ১০ শতাংশ শিশুর শারীরিক সমস্যা হয় এবং তাদের ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’-এ চিকিৎসার দরকার হয়। তাতে বাঁচার পরেও অনেক শিশুর মধ্যেই চার ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। একে বলা হয়, ‘ফোর ডি’ অর্থাৎ ডিজ়িজ, ডিজ়এবিলিটি, ডিফরমিটি এবং ডিফেক্ট। দ্রুত ওই সমস্যার সমাধান না করলে শিশুটি বেঁচে থেকেও জীবন উপভোগ করতে পারে না। দ্রুত এই সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে চিকিৎসার জন্যই ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টার’-এর পরিকল্পনা হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটোলজি বিভাগে ওই কেন্দ্র ছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর একটি কেন্দ্রও রাজ্য বাড়াতে পারেনি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বি সি রায় শিশু হাসপাতালে এই রকম একটি কেন্দ্র খোলা হবে। যন্ত্রপাতির বরাতও দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রক তা জানতে পেরে প্রতিটি জেলায় একটি কেন্দ্র হবে বলে জানায়। তাতে কলকাতায় এসএসকেএম থাকায় বি সি রায়কে অনুমতি দেওয়া সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, তখন বি সি রায় হাসপাতালকে উত্তর ২৪ পরগনার হাসপাতাল বলে চালানোর চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত সব ভেস্তে যায়।
আবার রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রম (আরবিএসকে)-এর কিছু কর্মীকে এই ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টার’গুলিতে নেওয়া হবে বলে বাছাই করা হলেও কেন্দ্রগুলি তৈরি না হওয়ায় ওই কর্মীরা কাজ না করেও বেতন পেতে থাকেন। এই ধরনের ১২ জন অপ্টোমেট্রিস্ট ছিলেন কলকাতা জেলা কেন্দ্রে। সমালোচনার মুখে পড়ে বছরখানেক আগে তাঁদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
এই কেন্দ্রগুলি তৈরির দায়িত্বে এত দিন ছিলেন ভূষণ চক্রবর্তী। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ভূষণবাবুর কথায়, ‘‘অনেক কর্মসূচি একসঙ্গে করতে গিয়ে কিছু দেরি হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলির জন্য লোক নিয়োগে একটু সমস্যা হয়েছিল।’’ অনেকের অবশ্য অভিযোগ, ওই সরকারি কেন্দ্রগুলি চালু হলে অনেক বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসা ধাক্কা খেত। তাই ওই হাসপাতালগুলির একাংশ স্বাস্থ্য দফতরের কিছু অফিসারকে প্রভাবিত করে কাজের গতি কমিয়ে দেয়। সেই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেন ভূষণবাবু।
‘রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রম’-এ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অন্যতম উপদেষ্টা শুভঙ্কর দাসের দাবি, কেন্দ্রগুলি চালু করার জন্য দিল্লি টাকা অনুমোদন করে নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি লিখেছে। দিল্লিতে বৈঠক হলে সেখানেও রাজ্যের প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।