সরকারি প্রকল্পের কাজ চলাকালীন পাঁচিল চাপা পড়ে মৃত্যু হল চার বছরের এক শিশুর। বুধবার সকালের এই ঘটনায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আনন্দপুরের নোনাডাঙা এলাকা। নির্মাণ সংস্থার অফিস, গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়েরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালায় পুলিশ। কোনও মতে মৃতদেহটি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তদন্তে নেমে নির্মাণ সংস্থার এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি সংস্থার জেসিবি গাড়ির চালক। তাঁর গাফিলতিতেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, নোনাডাঙা ভাই ভাই কলোনির বাসিন্দা মৃত শিশুটির নাম সুরজিৎ সর্দার। এ দিন সকালে সাড়ে ন’টা নাগাদ লাঠি হাতে সাইকেলের টায়ার চালাতে চালাতে এলাকারই একটি ফাঁকা জমিতে পৌঁছয় সে। সেখানে তখন জেসিবি গাড়ি দিয়ে পাঁচিল ভাঙার কাজ চলছিল। একটি পাঁচিল শিশুটির উপরে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়েরা ভাঙা পাঁচিল সরিয়ে সুরজিৎকে উদ্ধার করেন। আনন্দপুর থানাক পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে পাঠায়।
সেখান থেকে ময়না-তদন্তের জন্য ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিশুমৃত্যুর খবর ছড়াতেই নির্মাণস্থলে চড়াও হন স্থানীয়েরা। নির্মাণ সংস্থার অফিস, বেশ কয়েকটি গাড়ি তাঁরা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। মারধরের পাশাপাশি সংস্থার কয়েক জনকে আটকেও রাখা হয় বলে পুলিশের দাবি। পরিস্থিতি সামলাতে আনন্দপুর এবং আশপাশের থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী যায় ঘটনাস্থলে। আটকদের উদ্ধার করতে এবং বিক্ষোভকারীদের থামাতে লাঠি চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থল দ্রুত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। বিক্ষোভকারীদের কয়েক জনকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে গেলে রাস্তা অবরোধ করেন অন্যরা। আটকদের ছেড়ে দিলে অবরোধ ওঠে। তবে নির্মাণ সংস্থার জেসিবি চালককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
সুরজিতের বাবা গণেশ সর্দার কলকাতা পুরসভার গাড়িচালক। এ দিন তিনি বাইরে ছিলেন। মা রত্না সর্দার বছর ছ’য়েকের ছেলে বিশ্বজিৎ, মেজো ছেলে সুরজিৎ এবং এক বছরের কোলের শিশু শিবাকে নিয়ে ঘরে ছিলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে রত্না বলেন, ‘‘সকালে চা-বিস্কুট খেয়ে ওরা খেলতে গিয়েছিল। কী করে বুঝব যে সুরজিৎ ফিরবে না!’’ স্থানীয়দের প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা পাঁচিল ভাঙার কাজ করছিলেন তাঁরা দেখে করলেন না কেন?’’ স্বপ্না হালদার নামে এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘আমরা বাচ্চাটার মৃতদেহ ছাড়তাম না। পুলিশ মারধর করে নিয়ে গিয়েছে। সদ্য সন্তানহারা মাকেও মারধর করেছে। ওই নির্মাণ সংস্থার লোকদের কড়া শাস্তি চাই।’’
সন্তানহারা মায়ের চিৎকারের মাঝেই দেখা গেল এক চালা টিনের ঘরের বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসে বছর ছয়ের বিশ্বজিৎ। চোখে-মুখে আতঙ্ক স্পষ্ট। কোনও মতে বলল, ‘‘ভাই রথ টানছিল। ওরা মেরে ফেলেছে। ইট পড়ে মাথা টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে!’’ ঘরের বাইরে পড়ে থাকা একটি সাইকেলের টায়ার দেখিয়ে শিশুটি বলে, ‘‘ওই যে রথ!’’ সেই টায়ারটি তখন পড়ে মাটিতে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।